বিশ্বকাপের আগে মরক্কোকে নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, ততবার এসেছে আশরাফ হাকিমির নাম। দলের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে স্পেনের বিপক্ষে ১২০ মিনিটের জমজমাট লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রেখে পেনাল্টি শট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। হাকিমির গোলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে মরক্কোর।
পেনাল্টি শটে জয় নিশ্চিত করার পর হাকিমি ছুটলেন গ্যালারির দিকে। যেখানে ছেলেকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় বসে আছেন মা। এরপরই সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। এতে দেখা যায়, মা সাইদা মু ছেলের গালে চুমু খাচ্ছেন। আর ছেলে চুমু খাচ্ছেন মায়ের কপালে। এর আগে বেলজিয়ামের বিপক্ষে মরক্কোর স্মরণীয় জয়ের পরও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্জালে সাড়া ফেলেছে মা-ছেলের যুগল এ ছবি। পিএসজির এ ফুটবলারের জীবন বড় সংগ্রামের। আর এই সংগ্রামের অন্যতম সারথি তার মা সাইদা মু। যে মা তার সন্তানদের মানুষ করতে করেছেন পাহাড়সম কষ্ট। পরিবার সামলাতে স্পেনে করেছেন বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ। তার বাবা হাসান হাকিমিও কষ্ট করেছেন স্পেনের রাস্তায় রাস্তায়। ফেরি করে বিক্রি করেছেন মালামাল।
হাকিমির জীবনের গল্পে কোনো লুকোচুরি নেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মা ঘর পরিষ্কার করতেন। বাবা ছিলেন রাস্তায় ভাসমান বিক্রেতা। আমরা একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। যারা জীবিকার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আজ আমি প্রতিদিন তাদের জন্য লড়াই করি। তারা আমার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তারা আমার ভাইদের আমার সফলতার জন্য অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।’
তিনি চাইলে স্পেনের হয়ে খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বেছে নিলেন মরক্কোকে। কারণ, এটি তার পিতৃভূমি। জন্মসূত্রে স্পেনের নাগরিক হলেও তিনি মরক্কোরও নাগরিক। তার ভাষ্য: ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।
আশরাফ হাকিমি বর্তমানে মরক্কো জাতীয় দলের পাশাপাশি পিএসজিতে খেলেন। ফুটবলই তার জীবন পাল্টে দিয়েছে। তার স্ত্রী তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত স্বনামধন্য স্প্যানিশ অভিনেত্রী হিবা আবুক। চলতি বছর অক্টোবরে এই দম্পতিকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে ‘ভোগ অ্যারাবিয়া’।