‘আমার বাবার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে হানিফ সাহেব এত তথ্য জানেন, আমার আগে থেকে এটা জানা ছিল না। আমি আশা করি, এর পর যে সরকার আসবে, রিমান্ডে নিয়ে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উনার কাছে নিশ্চয়ই খুব ভালো তথ্য আছে। কারণ, উনি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন যে, কারা আসলে আমার বাবার খুনি উনি ভালো করে জানেন।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফকে রিমান্ডে দেখতে চান কিবরিয়া পুত্র রেজা কিবরিয়া।
‘আওয়ামী লীগের পরে’ যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, সেই সরকার এই উদ্যোগ নেবে- এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন নবগঠিত রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক।বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে এই কথা বলেন রেজা কিবরিয়া।
আগের দিন হবিগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, ‘হবিগঞ্জের কৃতী সন্তান শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। আর আজ ক্ষমতার লোভে তার ছেলে রেজা কিবরিয়া বাবার হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এই বক্তব্যের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমার বাবার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে হানিফ সাহেব এত তথ্য জানেন, আমার আগে থেকে এটা জানা ছিল না। আমি আশা করি, এর পর যে সরকার আসবে, রিমান্ডে নিয়ে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উনার কাছে নিশ্চয়ই খুব ভালো তথ্য আছে। কারণ, উনি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন যে, কারা আসলে আমার বাবার খুনি উনি ভালো করে জানেন।
‘কেইস অবশ্য ১৪ বছর ধরে চলছে। কিন্তু উনার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে, মনে হয় এটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। উনাকে রিমান্ডে নিলে আশা করি এই খবরটা পাওয়া যাবে। আমি আশা করি আগামীতে যে সরকার হবে তারা উনাকে বিদেশে পালানোর কোনো সুযোগ দেবে না। আমার বাবার কেসে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আমি এখন খুব জরুরি মনে করি।’
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান কিবরিয়া। সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কিবরিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়া হয়নি এমনকি মামলার তদন্ত ইচ্ছা করেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ করে কিবরিয়া পরিবার।
সে সময় শাহ কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়ার কর্মসূচি ‘শান্তির পক্ষে নীলিমা’ বেশ সাড়া ফেলেছিল। জোট সরকারের আমলে আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে একাধিকারবার নারাজি আবেদনও দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে। তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে যুক্ত করে মোট ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দেন। এই প্রতিবেদনেও নারাজি আবেদন করেন আসমা কিবরিয়া। পরে দেয়া হয় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ।
পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৩২ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। এই আসামিদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা যেমন আছেন, তেমনি আছেন বিএনপির একাধিক নেতাও।
মামলার আসামি বিএনপি নেতাদের মধ্যে আছেন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেটের বরখাস্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউছও।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে কিবরিয়ার আসনে তার ছেলের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।
সে সময় রেজা কিবরিয়া ছিলেন গণফোরামে। তাকে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলে ভাঙন দেখা দেয়ার পর তিনি যোগ দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণ অধিকার পরিষদে।
রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বলেছেন, বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনের জন্য তারা বিএনপির ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নিয়ে সিমপ্যাথি আছে: রেজা কিবরিয়া
হানিফের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি বলেছেন, আমি রাজনীতি করি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এটা আসলে আমার মূল উদ্দেশ্যে না। মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাদের দলের মতো চোর, খুনি, বাটপার…। আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আমি রাজনীতিতে আছি।
‘আমি মনে করি এটা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে ক্ষমতায় যাব কি না- এটা আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করাটা আমাদের সব বিরোধী দলের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কারণ আপনারা দেশের অনেক ক্ষতি করছেন।’