Breaking News

বন্দিদশা থেকে ফিরে বাংলাদেশের গোপন কারাগারের বর্ণনা দিলেন গুমের শিকার ব্যক্তিরা-VOA

বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের রাখা হয়, এমন একটি গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থান প্রকাশ করেছে সুইডেন ভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টাল। চমকে ওঠারর মতো একটি ভাষ্য এবং ভিডিও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে, ওই গোপন কারাগার নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে তারা।

নেত্র নিউজের ওই বিশদ প্রতিবেদনটি জোরপূর্বক গুমের শিকার দুজনের রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যারা বলেছে যে, তাদের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে একটি কারাগারের ভিতরে রাখা হয়েছিল। ভিওএ-এর সাথে টেলিফোন সাক্ষাত্কারে উভয় ব্যক্তিই নেত্র নিবন্ধের বিশদ বিবরণটি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।

ওই দুই ব্যক্তির মতে, কারাগারটির নাম আয়নাঘর এবং এটি পরিচালনা করে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স, বা ডিজিএফআই।
এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য ডিজিএফআইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা কোন সাড়া দেয়নি।

নেত্র নিউজ, কারাগারটির সেলের কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন, এমন কিছু সামরিক অফিসার তাদের ওইসব ছবি সরবরাহ করেছেন।
নেত্র নিউজের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ সফর করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাশেলেট। গত রবিবার মিশেল ঢাকা পৌঁছান এবং ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির দ্বারা জোরপূর্বক গুমের ব্যাপারে ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে তিনি কথা বলেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মতে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৬০৫ জন দেশে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮১ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এবং ১৫৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৮৬ জন পুরুষের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে এদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তাদের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। গুমের শিকার ওইসব ব্যক্তি এখনও গোপন রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা আটক রয়েছেন কিংবা তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

বাশেলেটের সাথে কথা বলার পর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে “বলপূর্বক গুম” বলে কিছু নেই। অন্যদিকে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ অপরাধ করার পর, অন্য দেশে পালিয়ে গেছে, কিংবা দেউলিয়া বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তারা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হবার পথ বেছে নিয়েছে।

এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “নেত্র নিউজের তদন্তে জীবিত ব্যক্তিদের দ্বারা বলপূর্বক গুমের ঘটনার হতাশাজনক বিবরণ এই ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহি করতে, অবিলম্বে একটি স্বাধীন, এবং কার্যকর তদন্তের উপর তাগিদ দেওয়া উচিত।”
বন্দী শেখ মোহাম্মদ সেলিম এবং হাসিনুর রহমানের পৃথকভাবে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল নেত্র নিউজ। আশ্চর্যজনকভাবে তারা গোপন কারাগারের একই রকম বর্ণনা প্রদান করেছেন, ফলে নিউজ পোর্টালটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, তাদের একই জায়গায় রাখা হয়েছিল।

তারা তাদের নিজ নিজ কক্ষগুলিকে জানালাবিহীন বলে বর্ণনা করেছেন। সেখানে, কেবল একটিমাত্র বাতি ছিল এবং ঘরটির ছাদ ছিল খুবই উঁচু। এছাড়া সেখানকার বড় বড় নিষ্কাশন ফ্যানগুলি প্রায় ক্রমাগত এতোই জোরে চলত যে, অন্য কোনও শব্দ সেখানে আর শোনা যেত না। তারা সেখানকার বাথরুম, খাবার এবং দেয়ালের খোদাইয়ের অনুরূপ বর্ণনাও প্রদান করেছে। সেখানকার পূর্ববর্তী বন্দিরা তাদের জানিয়েছে যে, “ডিজিএফআই-ই” তাদের বন্দী করেছিল।

ভিওএ-এর সাথে আলাপকালে নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, বেঁচে যাওয়া এই দুই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের। “তারা এখন তাদের সাহসী সাক্ষ্যের জন্য বিশ্বের কাছে পরিচিত। তাদের বা তাদের পরিবারের কোনো ক্ষতির চেষ্টা করা হলে, তা অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আনা হবে।”

(ভয়েস অফ আমেরিকার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করছেন ফয়সাল মাহমুদ।)

Check Also

পুলিশের সাদা ব্যাগে কি ছিল ? চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন সাবেক আইজিপি শহিদুল হক ।

পুলিশের সাদা ব্যাগে কি ছিল ? চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, দেখুন ভিডিওতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *