ছাইদুর রহমান নাঈম, কটিয়াদী( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে দৌড়ের নৌকার সাথে ধাক্কায় ডুবে যায় একটি ছোট নৌকা। এর আগে এই নৌকায় কয়েকজনের মোবাইলে লাইভ চলছিল নৌকা বাইচ। এমন সময় দৌড়ের নৌকা সামনে পড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ থাকেনি৷ মুহুর্তের মধ্যে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে তলিয়ে যায়। এমন সময় কিছু মানুষকে সাঁতার কেটে ভেসে থাকতে দেখা যায়। তখনো হাতে ভাসমান অবস্থায় ফোনে লাইভ চলছিল। মানুষের বাঁচার আকুতি ভেসে আসছিল। এমন সময় দুই শিশুকে একে অপরের কাধে ধরে ভেসে থাকতে দেখা যায়। তাদের কন্ঠে ছিল বাঁচার আকুতি৷ সাথে আরো কয়েকজন হাতে ফোন নিয়ে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এমন সময় দৌড়ের অপর আরো একটি নৌকা সাথে দিয়ে যেতে দেখা যায়।তারাও উদ্ধারে কেউ থামেনি। বিপদ দেখেও তাদের কাছে দৌড় চালু রাখা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এই দৃশ্যটির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। ভিডিওটি দেখে শিশুদের জন্য আফসোস করছে সবাই। প্রশ্ন উঠেছে, শিশুদের জীবনের চেয়ে কি মোবাইলের দাম বেশি ছিল? দৌড়ের নৌকা দেখেও কেন বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি এই প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। ছবিটি এখনো কাঁদাচ্ছে সবাইকে।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সাহেবেরচর এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাডুবির ৪০ ঘন্টা পর বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের পাগলা থানা এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তিন স্থান থেকে তিনজনের লাশ ভাসমান অবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় কিশোরগঞ্জ ও হোসেনপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া লাশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে পুলিশ নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ সময় স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকারপরিবেশ।স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজদের লাশ ভাসতে দেখে স্বজনদের খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তিনজনের লাশ তিন জায়গা থেকে উদ্ধার করে।
নিহতের স্বজনরা গিয়ে তাদের লাশ সনাক্ত করেন। লাশ উদ্ধারের পর নিহতদের পরিবারের অনাপত্তির মুখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়।পুলিশ ও নৌকা ডুবিতে নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাসমান অবস্থায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ময়মনসিংহের পাগলা থানার চরশাকচুঁড়া এলাকা থেকে ইয়াছিনের লাশ, ইয়াসিনের চাচা সিফাতের লাশ হারিনা (গাবিশোমহল) থেকে ও শামীমের লাশ লাইমকাল এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উদ্ধার করা হয়।নিহত শামীম (৩২) উপজেলার তারাপাশা মৃত কিতাব আলীর ছেলে, ইয়াছিন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চর শাকচুঁড়া গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে ও সিফাত (১৭) ইয়াছিনের চাচা সামাদ মুন্সীর ছেলে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলা সিদলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদে শেখ রাসেল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন।নিহতদের স্বজনদের দাবি, কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এ রকম দুর্ঘটনায় তাদের প্রাণ দিতে হল।ভৈরব নৌ পুলিশের এসআই (কিশোরগঞ্জ অঞ্চল) মো. রাসেল মিয়া জানান, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের বিষয়ে আয়োজকরা তাদেরকে অবগত না করায় এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাসুদ আলম জানান, নিহতদের পরিবারদের কেউ লাশের ময়না তদন্ত করতে ইচ্ছুক না থাকায় তাদের মুছলেকায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।