নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণার জেরে পদবঞ্চিতদের হামলায় ১০ জন আহত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে খালিয়াজুরী আওয়ামী লীগের নতুন ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদেক (৫২), মেন্দিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন কমিনি (৩৩), যুবলীগ কর্মী আওয়াল ও সাইফুলসহ ছয়জন স্থানীয় নেতাকর্মী মোহনগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এছাড়া নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে হামজাসহ দুইজন ও মদন হাসাপাতলে চারজন ভর্তি হয়ে চিকিৎিসাধীন রয়েছেন।
এদিকে খালিয়াজুরী সদর ও বোয়ালীতে সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, বুধবার (১৯ অক্টোবর) খালিয়াজুরী কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উদ্বাধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান। পরে বিকেলে অ্যাডভোকেট অসীত সরকারকে সভাপতি ও সাদেকুর রহমান সাদেককে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
এতে, পদবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা সম্মেলন মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। এতে নেতাকর্মীরা হামলা-ভাঙচুরের মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পুলিশ গিয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশের ডাকবাংলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।
দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পুলিশ প্রহরায় নেতারা খালিয়াজুরী ত্যাগ করেন। পরে পথে বোয়ালী এলাকায় পৌছলে আরকে দফায় হামলার মুখে পড়েন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের উদ্ধারে গেলে ফের সংঘর্ষ হয়। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে জেলা কমিটি পরিস্থিতি শান্ত করতে নতুন ঘোষিত কমিটি স্থগিত করেন।
এছাড়া বৃহস্পতিবারের (২০ অক্টোবর) মোহনগঞ্জ ও শুক্রবারের (২১ অক্টোবর) বারহাট্টা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেন।
মোহনগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদেক জানান, আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। বিগত সময়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দলের জন্য আমার ও আমার পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু বুধবার সম্মেলনে আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করতেই পদবঞ্চিত আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাকের নির্দেশে তাদের অনুসারীর হামলা ভাঙচুর শুরু করে। এর মধ্যে সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান বিএনপির লোক। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে স্বর্ণের ধানের ছড়া উপহার দিয়েছিলেন। পরে টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সহ-সভাপতি হয়েছেন। আতাউর রহমান যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের লোক হয়ে যান। তারা পদ পাবে না জেনেই আগে থেকে শত শত লোক নিয়ে হামলা করার জন্য রেডি হয়ে ছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা অবরুদ্ধ করে রাখে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। তবে পুলিশ ও এলাকার প্রকৃত আওয়ামী লীগ বান্ধব কর্মীরা তাদের প্রতিহত করেছে।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে আমাকেও আমার লোকজনকে পরিকল্পিতভাবে পথ আটকে মেরেছে। এদিকে বোয়ালীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর হামলা করেছিল। সেখানে এলাকাবাসী ও আমাদের লোকজন মিলে তাদের উদ্ধার করেছে। এতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী আহত হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে পরামর্শ করে এ ঘটনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, খালিয়াজুরী আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হামলা-সংঘর্ষে উসকানি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অকারণে আমাদেরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। নতুন কমিটিতে যাদের সভাপতি-সম্পাদক করা হয়েছে তাদের এলাকার কেউ চেনেই না। জেলা কমিটির সাথে পরামর্শ না করেই কেন্দ্রীয় কমিটির শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অসীম কুমার উকিল ও সাজ্জাদুল হাসান মিলে এই পকেট কমিটি ঘোষণা করেছেন। ফলে স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা এর কমিটিকে মেনে না নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা হট্টগোল করে। এখানে আমাদের কী করার থাকতে পারে?
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। সভায় বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শফি আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, সংরক্ষিত নারী আসন-১৭ এর সাংসদ হাবিবা রহমান খান শেফালী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল প্রমুখ।