Breaking News

বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্রের কথা কথা শোনা দুর্ভাগ্যজনক: প্রধানমন্ত্রী

সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্রের কিছু শেখার নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র, ভোট ও মানবাধিকারের কথা শোনা দুর্ভাগ্যজনক।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘শেখ রাসেল পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় খুন করা হয় তার ১১ বছরের সন্তান শেখ রাসেলকেও। তার জন্মদিন ১৮ অক্টোবর পালিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহন, তার আমলের জাতীয় নির্বাচন ও নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। একটা কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? ১৫ আগস্ট আমরা যারা অপনজন হারিয়েছি…আমাদের অপরাধটা কোথায় ছিল?’
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহন এবং তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, একজন সেনাপ্রধান হিসেবে সে (জিয়াউর রহমান) দায়িত্ব নিল। কখন? যখন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হলো এবং অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়া হলো। তাদের (বিএনপি) মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়!’

‘অথচ এদের হাতেই তো বারবার, আমার ওপরেও কতবার আঘাত এসেছে! জানি না বেঁচে গেছি, আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন বোধহয় এদিনটি দেখার জন্য…যে নামগুলো মুছে ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে; আমার বাবার নাম, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, যেখানে তার নামটাও নেয়া যেতো না এমন একটা পরিবেশ ছিল। সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা, বিচারহীনতার যে কালচার তৈরি হয়েছিল, আজকে জাতি সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

‘আমার অধিকার, আমার মানবাধিকার, আমার বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়া, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়া, এই অধিকার তো আমার ছিল। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম, রেহানা ছিল, আমরা তো বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেটা সমাধান করতে হলো। বাংলাদেশে কি বিবেকবান কোনো মানুষ ছিল না?’

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ করতে যেসব বিচারক ‘বিব্রতবোধ’ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ‘খুব বড় বড় দার্শনিক’ হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কিছু বলি না। কারণ, আমার একটাই লক্ষ্য। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, নিরাপদ জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।’
ঘাতকদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল

বাংলাদেশে এমন অন্যায় আর ঘটুক সেটা চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ, কতকিছুই হয়। কই? তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, যারা এই ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল, চক্রান্তের সঙ্গে ছিল এবং হত্যার পর যারা এই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে, শুধু পুরস্কৃত না, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া, প্রমোশন দেয়া, এমনকি, যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা, এই অন্যায়-অবিচার তো আমি এসে নিজের চোখে দেখেছি।’

‘তাহলে আজকে আমরা মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত কথা গালভরা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’
বুলেটের আঘাতে কোনো শিশুর জীবনপ্রদীপ যেন নিভে না যায়
নিজের শরণার্থী ও যুদ্ধবন্দি জীবনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ, ধ্বংস ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার বদলে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার কথা বলেন।

কবি সুকান্তের ভাষায় তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এই আমার অঙ্গীকার। এটাই করতে চাই। আমার বাংলাদেশ যেন স্বাধীনতার চেতনায় এগিয়ে যায়, একটা শান্তিপূর্ণ বিশ্ব আমরা চাই। যুদ্ধ চাই না, ধ্বংস চাই না, অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না, শান্তি চাই আমরা, শান্তি চাই। কোনো শিশু রিফিউজি হোক চাই না, বুলেটের আঘাতে কোনো শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যাক, বা তার ছোট্ট দেহ ক্ষত বিক্ষত হোক, সেটা আর চাই না। বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক। আর আমার দেশের মানুষ ভালো থাকুক।’

শেখ হসিনা বলেন, ‘আজকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, কত শিশু আজকে এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু আজকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সেখানকার শিশুরাও রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে।’
৭৫ সালে বিদেশে শেখ রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে না যাওয়ার আক্ষেপ
১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গেছেন দেশের বাইরে থাকায়। তিনি জানান, সে সময় তারা রাসেলকেও বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাবা-মা দেননি।
সেই আক্ষেপের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তখন সে অসুস্থ ছিল। তাছাড়া কেন যেন মা, আব্বা রাজি ছিলেন না। সবাই চলে গেলে বাসা খালি হয়ে যাবে। এখন মনে হয়, তাকে যদি সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম, তাহলে রাসেলকে এভাবে ঘাতকের হাতে জীবনটা দিতে হতো না।’
‘আজকে তার বয়স হতো ৫৯ বছর। হয়তো সে জীবনে অনেক বড় হতে পারতো। তার জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকে বলত সেনা অফিসার হবে। বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা দেখতাম, কিন্তু তাকে বাঁচতে দেয়া হয়নি।’
ছোটভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ছোট্ট শিশু, একটা ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। ঝরে গেল চরম নির্মমতার মধ্য দিয়ে, ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে।’
শেখ রাসেলের শৈশবের দুরন্তপনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় গেলে ছোট ছোট বাচ্চাদের জড়ো করতো। তাদের সে প্যারেড করাতো। প্যারেডের পর প্রত্যেককে খাবার দিতে হবে, প্রত্যেককে নতুন কাপড়-চোপড় দিতে হবে। প্যারেড শেষে সবাইকে আবার পুরস্কার দিতো এক টাকা করে। তার এই শিশুবাহিনীর জন্য আমার মা সবসময় কাপড়-চোপড় কিনে নিয়ে যেতেন। আমার চাচা তখন ব্যাংক থেকে নতুন এক টাকার নোট হাতে রাখতেন।’
মুক্তিযুদ্ধকালে বন্দিদশা স্মরণ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার এবং তারপর পরিবারের সবাইকে ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের একতলা একটি বাড়িতে বন্দি করার পরের ঘটনাপ্রবাহও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনো আবসাবপত্র ছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে আমাদের একটি কম্বল দেয়া হয়েছিল বসার জন্য। ধুলোবালি ভরা সেই বাড়িতে আমাদের স্থান হয়। ছোট্ট রাসেল, ওই বন্দিখানায় তার খেলাধুলার কিছু নেই, পড়াশোনার কিছু নেই, এমনকি ওই এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল।’
‘ওই অবস্থায় তার ভেতরে যে অব্যক্ত বেদনাটা, মুখ ফুটে কিন্তু বলতো না, চোখে পানি। যদি জিজ্ঞেস করতাম, কী হলো চোখে পানি কেন? বলতো, না, চোখে কী যেন পড়েছে। কেমন যেন ওই বাচ্চটাও তার কষ্টটা লুকানোর একটা চেষ্টা করতো।’
‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ অন্যরা।
‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ শীর্ষক স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে।
রাসেলের দুরন্ত শৈশবের ধূসর পাণ্ডুলিপি নিয়ে রচিত বইটি সম্পাদনা করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। বইটি প্রকাশে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ রাসেল সম্পর্কিত সব গ্রন্থনা, প্রকাশনা ও গবেষণায় সহায়তা করে থাকেন ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে শেখ রাসেল পদক প্রদান
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ প্রবর্তিত ‘শেখ রাসেল পদক ২০২২’ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু-কিশোর, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি, ক্ষুদে প্রোগ্রামার, ক্ষুদে উদ্ভাবক, ক্ষুদে লেখক, শিক্ষা, ডিজিটাল স্কুল এবং ডিজিটাল এক্সিলেন্স ক্যাটাগরিতে ১০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এ পদক দেয়া হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের জীবনী নিয়ে নির্মিত ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’র ট্রেলারও প্রদর্শিত হয়। এই অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। এটি শিগগির মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Check Also

আ.লীগ নেতার মারধরে ছাত্রলীগ নেতা হাসপাতালে 

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জিহাদি অনুসারীদের নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে মারধর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *