রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে লেগুনার চাকায় হাওয়া দেওয়ার সময় সেটি ফেটে যাওয়ার ঘটনায় নিহত হন বাহনটির চালক সুজন মিয়া (২০)। এ আকস্মিকতাকে শহীদি মৃত্যু বলছেন তার মা হাসিনা বেগম।
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, আমার ছেলে শহীদ হইছে আমিও হমু। আমিও আর এই পৃথিবীতে থাকমু না। আমার ছেলে এত বড় হইসে তার আমার সাথে ঘুমাইতো; আমার বুকে ঘুমাইতো। আমারে ছাড়া সে একা থাকতো না। এখন সে কবরে কীভাবে একা থাকবো। আমিও শহীদ হমু।
বুধবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে বেড়িবাঁধ এলাকার মাহাতাব পেট্রোল পাম্পের পাশে হাওয়া দেওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে। পরে সুজনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
ছেলের দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে আসেন হাসিনা বেগম। সেখানে ছেলেকে মৃত অবস্থায় পান তিনি। তারপর থেকেই আহাজারি করছেন তিনি। তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও তাকে সান্ত্বনা দিয়ে থামাতে পারছেন না।
জানা গেছে, সুজন ছোট থাকতেই তার বাবা সিরাজুল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (স্ট্রোক) কারণে মারা যান। পরে ছেলেকে নিয়ে লালবাগের আব্দুল আজিজ লেনে বসবাস শুরু করেন হাসিনা। সুজনের বড় ভাই শুকুর আলম গাজীপুর ও মেজ ভাই সোহাগ চাঁদপুর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন।
হাসিনা জানান, সুজন লেগুনা চালিয়ে যা ইনকাম করতেন, তা মায়ের হাতে তুলে দিতেন।সুজনের প্রতিবেশী ছায়ারানী জানান, মা যতটুকু ছেলেকে ভালোবাসতেন, তার চেয়ে বেশি মাকে ভালোবাসতেন সুজন।
সুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা লেগুনা মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, সুজন হাজারীবাগ সিকশন থেকে নিউমার্কেটের রাস্তায় লেগুনা চালাতেন। লেগুনার চাকায় হাওয়া না থাকায় হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে একটি দোকানে চাকায় হাওয়া দিচ্ছিলেন। এ সময় লেগুনার চাকা ফেটে তার মাথায় আঘাত লাগে। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চাকা ফেটে মাথায় আঘাত লাগার কারণে সুজনের মৃত্যু হয়েছে।