Breaking News

সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বরিশাল নগরী

সড়ক ও নৌ-পরিবহনের ধর্মঘট উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে গণসমাবেশস্থলে আসছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী বরিশালেএসে পৌঁছেছেন। হোটেলে সিট না পেয়ে গণসমাবেশের মাঠেই দু’রাত কাটিয়েছেন তারা। শুক্রবার যারা এসেছেন তারা কোনো ধরনের পরিবহন না পেয়ে এসেছেন সরাসরি পাঁয়ে হেঁটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল থেকে কোনো রুটের লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর ত্যাগ করেনি। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাসসহ যান্ত্রিক থ্রি-হুইলার চলাচল।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে আমাদের কর্মসূচিতে অসহযোগিতা করবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারের কোনো বাধাই বিএনপি নেতাকর্মীদের দমাতে পারবে না।

পটুয়াখালীর বাউফল থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যানে করে দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু এখন রূপাতলী থেকে হেঁটে বেলস পার্কে যাচ্ছি। সব বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছি।

ঝালকাঠিরন লছিটি থেকে আসা বিএনপিকর্মী হারুন বলেন, রাতভর আমাদের উপজেলার নদীতে ট্রলারে করে নেতাকর্মীরা এসে নেমেছেন। এখন হেঁটে বরিশাল এসেছি।

বরিশালে বন্ধ রয়েছে সকল পরিবহন ব্যবস্থা
বিআইডব্লিউটি’র বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বরিশাল-ভোলা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সকল রুটে কোনো লঞ্চ যাত্রী নিয়ে নদী বন্দর ত্যাগ করেনি। আবার কোনো লঞ্চ বরিশালে আসেনি। ভোররাতে চারটি লঞ্চ ঢাকা থেকে যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে এসে পৌঁছেছে। এ নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের ছয়টি লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা রয়েছে। এগুলো রাতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

পরিবহন ধর্মঘট থাকায় বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী থেকে কোনো রুটে বাস চলাচল করছে না। সেইসাথে অন্যান্য যানবাহনও বন্ধ রয়েছে। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে রয়েছে।

পারভীন আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য কোনোকিছুই পাচ্ছি না। আসলে রাজনৈতিক নেতাদের কারণে আমরা বলির শিকার হচ্ছি।

আরেক যাত্রী ষাটোর্ধ্ব খালেক পহলান বলেন, রিকশায় এত ভাড়া চাইছে যা দেয়া অসম্ভব। এভাবে সব বন্ধ করে দেয়া উচিত হয়নি।

সমাবেশস্থলেই জুমার নামাজ আদায়
বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলসপার্ক) উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশস্থলে জুমার নামায় আদায় করেছেন নেতাকর্মীরা। এ সময় দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

সেখানকার সামিয়ানার নিচে প্লাস্টিকের চট ও জায়নামাজ বিছিয়ে যথানিয়মে বয়ান ও খুতবা পাঠ করেন ইমাম। অনেকে আশপাশের মসজিদে গিয়েও নামাজ আদায় করেন।

সমাবেশ উদ্যানে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে বরিশালের বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান নান্টুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।

নামাজ আদায় শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। একই সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত নেতাকর্মী, মরহুম নেতাকর্মীদের রূহের মাগফিরাত কামনাসহ অসুস্থ নেতাকর্মীদের জন্য দোয়া করা হয়।

ধর্মঘটের নামে শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবি
বরিশালে ধর্মঘটের নামে শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ বরিশাল জেলা শাখা।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) পাঠানো এক বিবৃতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সংগঠক দুলাল মল্লিক ও মানিক হাওলাদার বরিশালে ৪ ও ৫ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানের ধর্মঘটের নামে শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।

নেতারা বলেন, ৪ ও ৫ নভেম্বরের এই ধর্মঘট শ্রমিকের স্বার্থে ডাকা হয়নি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডাকা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডাকা এই ধর্মঘট সফল করতে রূপাতলী, নথুল্লাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কতিপয় চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে। সংগ্রাম পরিষদের স্টিকারযুক্ত গাড়িতেও এই সন্ত্রাসীরা চলাচলে অবৈধভাবে বাধা দিচ্ছে। প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার জন্য শ্রমিকের রুটিরুজির উপর এভাবে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করা একইসাথে অন্যায় ও অমানবিক।

নেতারা অবিলম্বে ধর্মঘটের নামে সন্ত্রাস ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

বন্ধ করা হলো নগরীর সব খেয়া পারাপার
ধর্মঘটের কারণে বরিশালে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাসসহ তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এবার বন্ধ করে দেয়া হলো শহরকেন্দ্রিক খেয়া পারাপার। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের এক দিন আগে এ যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় নগরীর বাসিন্দারা পড়েছেন ভোগান্তিতে।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকালে শহরকেন্দ্রিক খেয়া পারাপার বন্ধ করার পাশাপাশি নগরের প্রবেশপথগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছে পুলিশ। জানতে চাওয়া হচ্ছে গন্তব্যস্থল।

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *