ঢাকার ধামরাইয়ে অর্ধশতাধিক ছাত্রের সঙ্গে সমকামিতা ও অনৈতিক কার্যকালাপের অভিযোগ উঠেছে এক কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি ধামরাইয়ের ভালুম আতাউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ভূগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জানা যায় অভিযুক্ত আমিনুল বিভিন্ন সময়ে কলেজটির প্রায় ৫০ জন সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রের সঙ্গে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানো, পরীক্ষার অনুমতি প্রদান না করাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সমকামিতা ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হতে বাধ্য করতেন। তার এই অসদাচরণের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজকর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির আহ্বায়ক এই কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে জানান, ভুক্তভোগী ৫০-৬০ ছাত্রের মধ্য থেকে ৩০ জনের (সাবেক ও বর্তমান) সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর যাবৎ সমকামিতায় লিপ্ত আছেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার কথা বলে এবং অনুচিত প্রভাব বিস্তার করে ছাত্রদেরকে কাছে টানেন। অতপর তিনি তাদেরকে জোরপূর্বক সমকামিতা পর্যায়ের কার্যকলাপে অংশ নিতে বাধ্য করেন এবং সমকামিতায় উৎসাহিত করেন। কোনো ছাত্র এ ধরনের কার্যকলাপের সাহায্য না করলে বা রাজি না হলে তার ভূগোল ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করানোর কথা বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে সৈকত (ছদ্মনাম) নামে কলেজটির মানবিক বিভাগের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে জানায়, আমিনুল স্যার আমাকে ক্লাসরুম থেকে কন্ট্রোলরুমে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক আমার গুপ্তঅঙ্গে হাত দেয় এবং আমার গুপ্তঅঙ্গে মুখ লাগায়। আমি এতে আপত্তি জানালে আমাকে পরীক্ষা দিতে দিবে না বলে ভয়ভীতি দেখায়।
শৈবাল (ছদ্মনাম) নামে কলেজের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানায়, স্যার আমাকে হাত ধরে ফাঁকা রুমে নিয়ে গুপ্তাঙ্গে হাত দিতেন। রাতে ভিডিও কলে আমাকে উলঙ্গ ছবি দিতে চাপ প্রয়োগ করতেন। এ ব্যাপারে আমি কলেজের আরো দুই শিক্ষকের কাছে বিচার দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা কোনো প্রতিকার করেননি।
সজিব (ছদ্মনাম) নামে কলেজের বিএম শাখার এক শিক্ষার্থী জানায়, একরুম থেকে অন্যরুমে আলমারি স্থানান্তর করার সময় আমিনুল স্যার আমার গুপ্তাঙ্গে স্বজোরে চাপ দেয় এবং আমাকে অশ্লীল কথা বলে। এ ঘটনায় ব্যথায় আমি কয়েকদিন ক্লাশে উপস্থিত হতে পারিনি।
এ ঘটনায় ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এক মাস অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত শিক্ষক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে নম্বরটি বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিয়েছেন আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ইউএনও মহোদয়কে প্রেরণ করেছি। বর্তমানে অভিযুক্ত শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এতদিন কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।