গাজীপুরে ২৯ বছর আগের একটি চাঞ্চল্যকার খুনের মামলার রায়ে নিহতের দুই ভাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য এক ভাই এবং চার প্রতিবেশী ও ভাড়াটে খুনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বাহাউদ্দিন কাজী এই রায় দেন।আলোচিত এই মামলার বাদী ছিলেন নিহত ও সাজাপ্রাপ্তদের ভাই।
অন্যদিকে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেছেন নিহতের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর বেপারী। তার চোখের সামনেই আপন ও সৎচাচারা প্রতিবেশীদের নিয়ে তার বাবাকে খুন করেন। ঘটনার সময় আইনজীবী বাহাদুর ছয় বছরের শিশু ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে ১৯৯৩ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে আপন ও সৎ চার ভাই প্রতিবেশীদের নিয়ে বড় ভাই সুলতান উদ্দিন বেপারীকে ছয় বছরের শিশুপুত্র বাহাদুর এবং অপর সহদোর ভাই মোতাহার হোসেন বেপারীর সামনেই কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেন। পরদিন মোতাহার হোসেন বেপারী বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় সৎভাই আবুল কাশেম বেপারী ও মান্নান বেপারী, সহদোর ভাই মাইন উদ্দিন বেপারী ও ময়েজউদ্দিন বেপারীসহ ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৫ সালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আজ সোমবার মামলার রায় প্রদান করেন।
রায়ে বিচারক সৎভাই আবুল কাশেম বেপারী ও সহদোর ভাই মাইন উদ্দিন বেপারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অপর ভাই মান্নান বেপারী এবং ভাড়াটে খুনি ও প্রতিবেশী দুলাল, সিরাজ, মাইনউদ্দিন ও আজিজুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ ছাড়া আসামি গিয়াস উদ্দিন খালাস পেয়েছেন।
মামলা চলাকালীন সহদোর ভাই ময়েজ উদ্দিন বেপারী, ভাড়াটে খুনি মোমন, মোস্তফা, ওয়াহাব ও হানিফার মৃত্যু হয়। ফলে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহতের ছেলে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর বেপারী বলেন, বাবার খুনের দৃশ্য এখনো তার চোখে ভাসে। আসামিরা নানাভাবে মামলার বিচার কার্যক্রম ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন বাবার খুনিদের বিচার ত্বরান্বিত করতে আইনজীবী হবেন। ২০১৪ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সনদ পেয়ে বাবার খুনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এ রায়ে তিনি অনেক খুশি।