ঢাকার মিরপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে চার ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখানোর পর অধ্যক্ষের আশ্বাসে রাস্তা ছেড়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধানমণ্ডি শাখার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ওই শাখা ‘বন্ধের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে এবং সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে মিরপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে বিকালে কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ঘটনাস্থলে এসে বলেন, ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার প্রতিশ্রুতিতে পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রাস্তা ছেড়ে গেলে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান।
বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শাখা হিসেবে ১৯৯৫ সালে ধানমণ্ডির এ ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ শাখায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে আঠারোশর বেশি।
চার ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়ল ভিকারুননিসার ছাত্রীরা
এ শাখা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে– এমন গুঞ্জনে গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন অভিভাবকরা। ধানমণ্ডিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস করার দাবিতে ভিএনএসসি (ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ) ঐক্য পরিবার, ধানমন্ডি শাখার ব্যানারে অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি স্কুলের সামনে তারা লিফলেটও বিলি করছিলেন গত কয়েক দিন ধরে।
এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে তারা ধানমণ্ডি ৮ নম্বরের স্কুল ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের মোড়ে এসে অবস্থান নেন। ফলে মিরপুর সড়কের এক পাশে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়।
সেখানে উপস্থিত একজন অভিভাবক বলেন, “আমার বাচ্চা এখানে পড়ে। এই শাখা বন্ধের পাঁয়তারা চলছে। কেন এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে? এই অপচেষ্টা বন্ধের প্রতিবাদে আমরা আজকে রাস্তায় নেমেছি।”
আরেকজন অভিভাবক বলেন, “বলা হচ্ছে এই শাখাটা জীর্ণ অবস্থায় আছে। এই শাখায় নাকি মাসে ১৮-২০ লাখ টাকা লস হয়। এখানে স্টুডেন্ট কম। এমন অজুহাতে এই শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে আমরা শুনছি।
“আমাদের বাচ্চাদের অন্য শাখায় ভর্তি করাতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি স্কুল থেকে। এত বছরের পুরানো একটা শাখা কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে? কোনো সমস্যা থাকলে সেটার সমাধান করা হোক।”
চার ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়ল ভিকারুননিসার ছাত্রীরা
পুলিশের উপস্থিতি বিক্ষোভ চলতে থাকলে কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং মূল শাখার (বেইলিরোড) শিক্ষক প্রতিনিধিরা বিকাল সাড়ে ৩টায় ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন।
মূল শাখার প্রভাতীর জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুস্তারি সুলতানা শিক্ষার্থীদের বলেন, “ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৭ বছর ধরে এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস করা যাচ্ছে না, কারণ এখানে জমি পাওয়া যাচ্ছে না।”
তাহলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে কেন, শিক্ষকদের কেন বদলি করা হচ্ছে– সেই প্রশ্ন শিক্ষার্থীরা তাকে করে।
উত্তরে এই শিক্ষক বলেন, “প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সার্কুলার দেওয়া হয়নি, তাই ভর্তি করানো হয়নি। আর শিক্ষকদেরও বদলি করা হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় চাইছেন, তারা বদলি হচ্ছেন।”
ধানমণ্ডি শাখা যে বন্ধ হবে না- এ বিষয়ে লিখিত ঘোষণার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষ কামরুন নাহার তখন বলেন, “এই শাখা এখান থেকে সরবে না। এটি বন্ধের তো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি, তাহলে লিখিত কেন লাগবে? আমার কথাটাই কী যথেষ্ট না?”
চার ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়ল ভিকারুননিসার ছাত্রীরা
স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্কুলের একার পক্ষে স্থায়ী ক্যাম্পাস করা সম্ভব না। অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চেষ্টা করব স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে। তোমরা সড়ক থেকে সরে যাও।”
অধ্যক্ষের আশ্বাসের পর সড়ক ছেড়ে যেতে শুরু করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
স্কুলের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি আবদুর রহিদ হাওলাদার বলেন, “অধ্যক্ষ আশ্বাস দিচ্ছেন, আমরা আস্থা রাখছি। আশা করছি এটা বন্ধ হবে না। স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে। যদি এরপর কোনো পাঁয়তারা দেখি, তাহলে আমরা আবার রাস্তায় নামব।
“আজকে বাচ্চাদের বলেছি চলে যেতে, ওরা চলে গেছে। অধ্যক্ষ আরও আগে এলে আরও আগে সমাধান হত। তারপও উনি এসেছেন, উনাকে ধন্যবাদ।”