খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে দলটি। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্র ও শনিবার বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর সমাবেশ সফল করতে আগাম পদক্ষেপ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি।
সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক এহেতেশামুল হক শাওন বলেন, ইতিমধ্যে জেলার কয়রা-পাইকগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও বাগেরহাট থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা খুলনা শহরের তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। সমাবেশ সামনে রেখে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশ সফল হওয়ার পরে উত্তেজনা তুঙ্গে বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা যে কোনো বাধা, ষড়যন্ত্র ও বিপত্তি মোকাবিলা করে খুলনার সমাবেশ সফল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, সড়কে নছিমন-করিমন চলে এ অজুহাত তুলে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা তো আজকের থেকে চলছে না। তাহলে ২১ ও ২২ তারিখ বন্ধ রাখতে হবে কেন? এটা ক্ষমতাসীন দলের একটি ষড়যন্ত্র।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে নেতাকর্মীদের আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া খুলনা মহানগর ও জেলার নয় উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির অভিযোগ, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ শরণখোলা থেকে খুলনায় আসার সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাসক দলের ক্যাডাররা। তাদের মোবাইল, নগদ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন ১৫ জন।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘২২ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে দুদিনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। ট্রলার বন্ধ করেও জনসমাগম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচারে হামলা করা হয়েছে। এখন দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে গণসমাবেশ হবে। নেতাকর্মীরা যতই আঘাত পাক, জন-উৎসাহ কোনোক্রমে ঠেকানো যাবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পাঁচ সহকর্মীকে হত্যার বিচার আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, এ বাহিনী বাংলাদেশের, কোনো দলের না। নিজের স্বার্থে, দলের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি স্বৈরতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করছে। যারা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান করছেন, তাদের এই দিনই শেষ দিন না, আরও দিন আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কর্মসূচি সফল করতে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। নেতাকর্মীরা লাঠি বহন করবে না, তবে তারা প্ল্যাকার্ড বহন করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের সমাবেশের সফলতা দেখে শাসক দল ও প্রশাসন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা খুলনার কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ইতিমধ্যে সব পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারা খেয়াঘাট বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ খুলনা মহানগরীসহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি, হয়রানি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, বিভাগীয় কর্মসূচি বানচাল করতে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবির আলী, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা বুলবুল মোল্লার বাড়িতে পুলিশ বুধবার রাতে অভিযান চালিয়েছে। সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছেন। এসব অপতৎপরতা চালিয়ে গণসুনামি রুদ্ধ করা যাবে না।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বলেন, পুলিশ কাউকে কখনো হয়রানি করে না। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে। বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক।