শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন। নানি কীভাবে নাতনির চেয়ে ১০ বছরের ছোট হয়! সত্যিই বিস্ময়কর, অবিশ্বাস্য। তবে জাতীয় পরিচয় পত্র তাই বলছে। নানির জন্ম ১৯৮৯ সালে! আর নাতির ১৯৭৯, সে হিসেবে নানি তার নাতির চেয়ে ১০ বছরের ছোট।
নিঃসন্তান নুর নাহার বেগম। বিয়ে হয়েছে স্বাধীনতার বহু আগে। অথচ তার বয়স এখন ৩৩ বছর! ফলে হতদরিদ্র বৃদ্ধা হয়েও ভুল বয়সের কারণে পাচ্ছেন না কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা। ঢাকার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের বেলনা বাবরকান্দী গ্রামে তিনি একটি জরাজীর্ণ ঘরে থাকেন।
বয়স্ক ভাতা পেতে একজন নারীর বয়স অন্তত ৬২ বছর হতে হয়। তার বয়স ৮০ বছরের কাছাকাছি। ১৩ বছরে আগে বিধবা হয়েও জোটেনি বিধবা ভাতা, অন্যের জায়গায় থাকনে। মেলেনি সরকারের দেওয়া ঘর-বাড়ি। আর এসব অপ্রাপ্তির মূলে রয়েছে জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল জন্ম তারিখ!
স্বামী নেই নুর নাহারের। মৃত্যুর আগে প্রবাসে থাকতেন তার স্বামী সেরাজ উদ্দীন। দেশে ফেরার পর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় স্বামীর চিকিৎসায় শেষ হয়ে যায় বিদেশ থেকে কামাই করা সব অর্থ। এর আগে একসময় স্বচ্ছলই ছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ভাগ্যের নির্মম খেলায় তিনি এখন নিঃস্ব।
অন্যের দেওয়া তিন/চারটি টিন দিয়ে ঘরের চালাটা কোনো মতে মেরামত করলেও বেড়ার টিনগুলো ভাঙা, খুঁটিগুলোও নড়বড়ে। রাস্তার ধারে আর নদীর পাড়ের ঘরের পাটাতনগুলোও জায়গায় জায়গায় ভাঙা! বাতাস থেকে বাঁচতে বস্তা দিয়ে নিজেই দিয়েছেন বেড়া। ছোট্ট টং ঘরটির নেই কোনো দরজা, ঘরে সামনের দিকটা বাঁশের চটি দিয়ে এমনভাবে আটকানো হয়েছে, দেখলে মনে হবে খাঁচা। ঘরে যাওয়া আসার একমাত্র রাস্তা ছোট একটি জানালা! যা দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যাওয়া আসা করেন এ বৃদ্ধা। ঘরের সামনের অংশে দোকান করেছেন তিনি। দিনে শতেকখানিক টাকার পণ্য বিক্রি হয়, তা দিয়ে পেট চলে না। তাই আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সহযোগিতায় কোনো মতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন তিনি।
ইস্রাফিল নামে তার দূর সম্পর্কের এক নাতি বলেন, আমার আপন নানির বয়স ৮০ বছরের বেশি। আমার বয়স ৪০ এর ওপর। নুর নাহার নানি আমার নানির চেয়ে বড়। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৩৩ বছর! এটা কেমন করে হয়?
ভাতিজা ইয়াসির জানান, আমার জন্ম ১৯৮৭ সালে, আমার বড় আরও দুই ভাই আছে। অথচ আমার বড় ফুফুর বয়স ৩৩ বছর!
নুর নাহার বলেন, মরার সময় নিজের ঘরে মরতে চাই, কোনো দুর্ঘটনায় নয়, সাধারণ মরার গ্যারান্টি চাই। ভাঙাচোরা ঘরে চাপা পড়ে মরে থাকলে আমাকে কে দেখবে? রোহিঙ্গারা ঘর পায়, খাবার পায়, দেশে হাজার হাজার মানুষ সরকারি নানা সাহায্য পায়, তাহলে আমি পাব না কেন? স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানদের বারবার বলেও একটি ঘর, একটি টিউবওয়েল পেলাম না। আমি ৮০ বছরের বৃদ্ধা এবং বিধবা হওয়া সত্যেও একটি সরকারি কার্ড নেই আমার। আমি একটি থাকার ঘর চাই। বিধবা ভাতা চাই।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, কার্ডগুলো জরুরি অবস্থার সময় করা। আমরা প্রায় প্রতিদিন শত শত আইডি কার্ড সংশোধন করছি। আবেদন পেলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, নুর নাহার বেগমকে আমাদের কাছে নিয়ে এলে আমরাই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।