করোনা মহামারীতে এক সময় মৃত্যুপুরী হয়ে উঠা ইতালিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। এতে দেশটির বেশ কয়েক চিকিৎসকদের ধারণা, ইতালিতে নভেল করোনাভাইরাস শক্তি হারাচ্ছে এবং শুরুর দিকের সেই করোনা ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেছে।
বিজনেস ইনসাইডার জানায়, রবিবার ইতালিয়ান টিভিতে মিলানের সান রাফায়েলে হাসপাতালের প্রধান আলবার্তো জাঙ্গরিলোর এমনটাই মত।
তিনি বলেন, বাস্তবে শুরুর দিকের সেই করোনাভাইরাসের ‘ক্লিনিকালি’ এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।
এক দুই মাস আগের সঙ্গে গত দশ দিনের করোনা পরিস্থিতি তুলনা টেনে নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেন ইতালির এই বিশেষজ্ঞ।
তবে দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাঙ্গরিলোর এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ইতালির এই চিকিৎসকের বক্তব্যগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়।
সোমবার ডব্লিউএইচও’র এপিডিমিওলজিস্ট মারিয়া ফন কেরকোভে এবং আরও কয়েকজন ভাইরাস ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইতালির পরিস্থিতিতে নিয়ে জাঙ্গরিল্লোর মন্তব্য নাকচ করে দেন।
ফন ফেরকোভে জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, সংক্রমণের সক্ষমতার দিক থেকে এটির (করোনাভাইরাস) কোনো পরিবর্তিত হয়নি। তীব্রতার দিক থেকেও এটি বদলায়নি।
সংস্থাটির জরুরি বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল রায়ান বলেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ হঠাৎ করে নিজ থেকেই দুর্বল হয়ে গেছে, এমন ধারণা করতে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ এটি এখনো ‘খুনে’ ভাইরাস।
ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটির পরিবর্তন এবং নতুন পরিবেশে এটির মানিয়ে নেয়া বা আচরণের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ফলে করোনার শক্তি কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েক ফরেস্ট ব্যাপটিস্ট মেডিকেল সেন্টার, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থওয়েল হেলথের বিশেষজ্ঞরাও ইতালির চিকিৎসক জাঙ্গরিলোর বক্তব্য নিয়ে সতর্কতা করলেন।
তারা মতে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি, যাতে বলা যায় ভাইরাসটি বদলে গেছে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক লিয়ানা ওয়েন বলেন, ইতালীয় চিকিৎসকের পরামর্শটি বিপজ্জনক হতে পারে। এটি একটি খুবই সংক্রামক রোগ। আমাদের আগের মতই সতর্ক থাকা দরকার।
এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ লাখ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন তিন লাখ ৭৫ হাজার ৬৪৩ জন। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৭ লাখের কাছাকাছি মানুষ।
ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজারের কিছু বেশি লোক, এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৪৭৫ জন। তবে গত দুই সপ্তাহে দেশটির করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কমে এসেছে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।