মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা থেকে নাম কাটার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান এ সব অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
জানা গেছে, ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের দরিদ্রদের কয়েকজনের নিকট থেকে উৎকোচ না পাওয়ায় তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দেন। এ জন্য গত মার্চ মাসে ৮ জন হতদরিদ্র চাল পাননি।
চালের সংশ্লিষ্ট ডিলার রাখাল চক্রবর্তী জানান, ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস গত মার্চ মাসে খাদ্যবান্ধবের তালিকা থেকে দাসেরবাজার ইউনিয়নের গুলুয়া গ্রামের সিদ্ধার্থ শংকর নাথ, বাবুল চন্দ্র দাস, মনজির আলী, পানিসাওয়া গ্রামের রিকেন্দ্র চন্দ্র দাস, দিপক দাস, চানপুর গ্রামের সত্যরঞ্জন দাস, রণজিৎ বিশ্বাস ও গপেন্দ্র বিশ্বাসের কার্ড বাতিল করে অন্য ৮ জনের নাম প্রতিস্থাপন করেছেন।
দিনমজুর মাখল লাল দাস অভিযোগ করেন ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। না দেয়ায় গত বছর খাদ্যবান্ধবের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দিয়েছেন। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এ ছাড়া ইউপি মেম্বার গত ২ বছর আগের বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতিমাসে নগদ ৫শ’ টাকা ও ৩০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছিল। মাস্টাররোলে স্বাক্ষর নেয়ার পর অনেক কৃষককে চাল দিয়ে টাকা নিয়ে যেতেন ইউপি মেম্বার বিজয় দাস।
এ দিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি প্রত্যেকটি ইউনিয়নে চলমান তালিকা যাচাই-বাচাইয়ে ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করা হয়।
এ সুযোগে ইউপি মেম্বার বিজয় দাস তালিকা থেকে নাম কাটার ভয় দেখিয়ে হতদরিদ্রের কাছ থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করেন। ১০ টাকা কেজি দরের কর্মসূচির কার্ডধারী দরিদ্র বিধবা সুমতি রানী বিশ্বাস জানান, কার্ড বানিয়ে দেয়ার জন্য মেম্বার ১০০ টাকা নিয়েছেন। এখন বলছেন উপজেলা থেকে অফিসাররা তদন্ত করছেন। তাদেরকে টাকা না দিলে তারা তোমার নাম কেটে ফেলবেন। ১ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি মেম্বারকে বিকাশে ৫শ’ টাকা দিয়েছেন।
চানপুর গ্রামের দরিদ্র লোকজন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ইতিমধ্যে ১৩ দফায় বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেছে। ইউপি মেম্বার বিজয় দাস কর্মহীন অতিদরিদ্র লোকজনকে খাদ্য সহায়তা না দিয়ে তার আত্মীয়-স্বজন ও অবস্থাশালীদের দিচ্ছেন।
ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের উপকারভোগী সুমতি রানী বিশ্বাসের নিকট থেকে ৫শ’ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ টাকা তার পুরনো পাওনা। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, এগুলো তার স্থানীয় শত্রুপক্ষের অপপ্রচার।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, বিষয়টি জানার পর অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।