সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১৮১২টি মন্দির সংস্কার হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সারাদেশে ১৮১২টি মন্দিরের সংস্কার করতে ২২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
‘সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার’ শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি মাসে শুরু করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন করবে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মোট ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সহায়তা আকারে ২ হাজার ৯৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ও সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) হতে ৩ হাজার ৩১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ২৩ লাখ। যা দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সমগ্র দেশে বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো মন্দির ধ্বংস করে দেয়। অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে হিন্দু সংস্কৃতি ও মন্দিরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। তাই আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হিন্দু জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।
একনেক সভায় ২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) ঋণ দেবে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ভূমি ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্প, ১৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প, ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাট জেলায় তুলশী গঙ্গা, ছোট যমুনা, চিড়ি ও হারাবতী নদী পুনঃখনন প্রকল্প, ১৯৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডেশন প্রজেক্ট এবং ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এবং গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নত করতে ৬১টি জেলার ২৭৫ উপজেলায় নির্মিত হবে ৩৪০টি সেতু। প্রতিটি সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হলো নতুন করে মহাসড়ক নির্মাণ করার প্রয়োজন নেই, রেলওয়ের দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সড়ক-নৌ-রেল-বিমানের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া দেশের সব নদী, পুকুর ও জলাশয় রক্ষায় মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও জানান মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করলেন কওমি মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে পবিত্র রমজান উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কওমি মাদরাসার নেতৃবৃন্দ।কওমি মাদ্রাসার রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও আল জামিয়াতুল কারিমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসার সহ-অধ্যক্ষ মাওলানামো. ইউনুস আলী অনুদানের চেক হাতে পাওয়ার পরে আজ বিকেলে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আগের বারের মতো, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে এবারো দেশের মাদ্রাসাগুলোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা আমাদের মনোবলকে চাঙ্গা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগের মোট ৭০৩ টি মাদ্রাসা ইতোমধ্যে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে অনুদান পেয়ে গেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘজীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি এবং প্রার্থনা করি যাতে দ্রুত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’ তিনি বলেন, তারা (কওমি মাদরাসা নেতারা) প্রার্থনা করছেন প্রধানমন্ত্রী যাতে তিনি পরিস্থিতিটি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।
কওমি মাদরাসাগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে খুলনা দারুল উলুম মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও খুলনা কওমি উলামা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রীর এক মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করেছেন উল্লেখ করে কাসেমী বলেন, অতীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তাদের কেউই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো ইসলামের সেবা করেননি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ূ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে ইসলামের সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।’খুলনা মহানগরীর আল মাহাদ আস-সালাদী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ (আর্থিক সহায়তা প্রদান) কওমি মাদ্রাসায় জড়িত সবাই অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী স্টাডিজ ও আরবি স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মর্যাদার সঙ্গে কওমি মাদ্রাসায়দাওরা-ই হাদীস সনদকে স্বীকৃতি দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় বৈষম্যের অবসান করেছেন।’
মাওলানা মামুন আরও বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ইসলামের বিস্তারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’এই বিপদজনক সময়ে কওমি মাদ্রাসাগুলোর জন্য ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে রাজশাহীর জামেয়া ইসলামিয়া শাহ মুখদুমের অধ্যক্ষ মুফতি শাহাদাত আলী বলেন, কোনো সরকার কওমি মাদরাসার জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটনা।তিনি বলেন, ‘এ কারণেই কওমি মাদ্রাসাগুলোর পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি ও প্রশংসা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা সঠিক ব্যক্তি।’
মুফতি আলী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আমার মাদ্রাসার জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি এবং যা আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করব। কেবল দরিদ্র ও অসহায় শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য কওমি মাদ্রাসায় আসে উল্লেখ করে মুফতি আলী বলেন, ‘সুতরাং, এই সহায়তা তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো উৎসাহিত করবে।’রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বরকুল্লাহ বিন দুরুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৬,৯৫৯ টি কওমি মাদ্রাসাকে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে ৭০৩ টি রংপুর বিভাগে, রাজশাহী বিভাগে ৭০৪, খুলনা বিভাগে ১,০১১, বরিশাল বিভাগে ৪০২, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯৭, ঢাকা বিভাগে ১,৭৮০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১,৪৮১ এবং সিলেট বিভাগে ৪৮১টি রয়েছে। বাসস