প্রথম আলোর প্রতিবেদন: দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে আল আমিনকে
অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের পেসার আল আমিন হোসেনকে। আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) তাঁর বিরুদ্ধে ‘সন্দেহজনক গতিবিধি’র অভিযোগ তোলায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর বদলি হিসেবে পেসার শফিউল ইসলামকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসার জন্য অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সে আগামীকালের টিকিটও বুকিং দেওয়া হয়েছে তাঁর নামে।
বিসিবির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি আল আমিন ঠিক কী ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। শুধু বলা হয়েছে ‘টিম রুলস’ ভাঙার অপরাধে তিনি বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতে দলে থাকবেন না। তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ম্যানেজারের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।আকসুর অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না টিম ম্যানেজমেন্ট বা বিসিবির কেউই। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালক অবশ্য বলেছেন, ‘আকসু যদি সে রকম কিছু পেয়ে থাকে, তারাই এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে।’
অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আকসু ক্যানবেরা থেকেই আল আমিনের ওপর নজর রাখছিল। সেখানে সন্দেহজনক কিছু লোকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও নাকি করেছেন এই পেসার! ব্রিসবেনে যাওয়ার পরও ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত হোটেলের বাইরে ছিলেন আল আমিন। নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টার পর কোনো খেলোয়াড় হোটেলের বাইরে গেলে তাঁকে টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু আল আমিন ওই এক ঘণ্টা হোটেলের বাইরে ছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি না নিয়েই।
আকসুর কাছ থেকে আল আমিনের ‘শৃঙ্খলাভঙ্গে’র তথ্য পেয়ে তাঁর ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিসিবি। জানা গেছে, ব্রিসবেনে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান এবং কয়েকজন পরিচালক এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে একটি সভা করেছেন। আল আমিনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তটি সেখানেই নেওয়া হয়।
আর পড়ুন, স্ত্রীকে তালাক দিলেন আল আমিন
স্ত্রী ইসরাত জাহানকে তালাক দিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটার আল আমিন হোসেন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) আদালতে দেওয়া লিখিত জবাবে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আল-আমিনের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার(৬ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে উপস্থিত হন আল আমিন। এরপর মামলার বিষয়ে ৭ পাতার একটি লিখিত জবাব দাখিল করেন। এ বিষয়ে পাঁচদিন পর শুনানি হবে বলে জানান বাদীর আইনজীবী শামসুজ্জামান।
তিনি বলেন, আসামি আল আমিন আদালতে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দেন। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে লিখিত জবাব দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তিনি গত ২৫ আগস্ট তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। তবে তার স্ত্রী তালাক সংক্রান্ত কোনো কাগজ পাননি।
এ বিষয়ে ক্রিকেটার আল আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান বলেন, আমি তালাকের বিষয়ে কিছুই পাইনি। আমি ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। আমি ন্যায়বিচার চাই।
এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে ক্রিকেটার আল আমিন আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় ৬ অক্টোবর পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
তারও আগে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটি করেন আল-আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আল-আমিনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
মামলায় বলা হয়, ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ইসরাত জাহান ও আল-আমিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুটি পুত্রসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি ভার্সনে কেজিতে পড়াশোনা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে আল-আমিন তার স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ দেন না এবং খোঁজ না রেখে এড়িয়ে চলেন। যোগাযোগও করেন না।
গত ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে আল-আমিন বাসায় এসে স্ত্রীর কাছে যৌতুকের জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। ইসরাত জাহান টাকা দিতে অস্বীকার করলে আল-আমিন তাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুসিসহ লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। সংসার করবেন না বলে জানান। ইসরাত জাহান ৯৯৯-এ টেলিফোন করে সাহায্য চাইলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ইসরাত জাহান। এ ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলাও হয়।