Breaking News

‘আমার ছেলের খুনিকে প্রশাসনসহ দেশের মানুষ সাহায্য করছে’ কাঁদতে কাদতে বললেন শিশু আব্দুল্লাহর মা

রাজধানীর কাওরানবাজারে ভাড়ায় চালানো রিকশা চুরি হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন শামীম নামে এক যুবক। গায়ের পোশাক, চুলের স্টাইল, অবয়ব আর স্মার্ট কথাবার্তা শুনে বোঝার উপায় নেই তিনি রিকশাচালক।
তবে তার মায়াকান্না পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ে। সেই দৃষ্টি এড়ায়নি বেসরকারি এক টেলিভিশন সাংবাদিকেরও। জনপ্রিয় সে টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।
নিজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, মায়ের অসুস্থতা, অল্প বয়সে বাবা হারানো আর শিক্ষিত আধুনিক যুবক হলেও মাস্ক পরে রিকশা চালিয়ে মায়ের চিকিৎসা করা যুবকের মায়ায় মজে দেশবাসী। প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পপতি এমনকি হত দরিদ্ররাও এগিয়ে আসেন তার সাহায্যে।

কেউ নিশ্চিত করেন তার একটি ভালো চাকরি, পড়া-লেখার দায়িত্ব, কেউবা আবার কিনে দিতে চান হারানো রিকশা। কোনো একজন দায়িত্ব নেন তার মায়ের চিকিৎসার। এমনকি অনেক তরুণী দেন বিয়ের প্রস্তাবও, নিজেরাই বানিয়ে নিতে চান ডাক্তার। রিকশা হারানো তো নয়, যেন আলাদীনের চেরাগ ধরা দিয়েছে শামীমের হাতে।

কিন্তু আসলে কে এই শামীম? কী তার পরিচয়?
জানা গেছে, শামিমের আসল নাম মেহেদী হাসান, গ্রামের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রোহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচর গ্রামে। তার বাবা মোতাহার হোসেন ২০১৬ সালে আপন নাতি শিশু আব্দুল্লাহ হত্যার আসামি। তিনি র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। শামিম ওরফে মেহেদীও একই মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

রিকশা হারিয়ে শামিমের মায়াকান্না দেশের লাখ লাখ মানুষের মনে দাগ কাটলেও ব্যতিক্রম ছিল তার নিজ গ্রাম কেরানীগঞ্জের মুগারচর ও এর আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। তাদের অভিযোগ, টিভিতে ভাইরাল হওয়া তার একটি ফন্দি। সে মিথ্যা কথা বলে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গ্রামে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও তিনি নিজেকে রিকশা চালক সাজিয়েছেন। মাকে নিয়েও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। নিজে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হয়ে মিডিয়ায় কথা বলছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা থেকে সাহায্য তুলছেন, অথচ তার সম্পদের অভাব নেই।

তারা বলছেন, শামিম (মেহেদী) ও তার পরিবারের লোকজন মিলে ২০১৬ সালে শিশু আব্দুল্লাহকে হত্যা করে একটি ড্রামের ভেতর রেখে তার পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। সে মামলায় তার বাবা মোতাহার র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। তাছাড়া ওই মামলায় একজনের ফাঁসি, অন্যান্য আসামির সঙ্গে মেহেদীর ১০ বছরের জেল হয়।

পরে বয়স বিবেচনায় জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ভয়ানক মাদক ও চুরির কিশোর গ্যাং তৈরি করেন। এক পর্যায় এলাকার মানুষ ক্ষেপে গেলে তিনি শহরে পালিয়ে গিয়ে নতুন নাটকের ছক আঁকেন। এখন চলছে তার অনুদান নামক নতুন ব্যবসা। এই নাটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন লোকজন খতিয়ে না দেখেই খুনিকে সহায়তা করছে বলে দাবি এলাকাবাসী ও আব্দুল্লাহর স্বজনদের।
তারা মনে করছেন, যে শান্ত্বনা মেহেদি হাসান শামীম ও তার পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে, সেটা তাদের নির্মমতার শিকার আব্দুল্লাহর পরিবারকে দেওয়া উচিত ছিল।

নিহত আব্দুল্লার মা রিনা বেগম জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দেখে বহু কষ্টে সময় পার করছি। আমার ছেলের খুনিকে প্রশাসনসহ দেশের মানুষ বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। একজন খুনিকে দেশের মানুষ বাহবা দিচ্ছে। অথচ সে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। সে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলে প্রতারণা করেছে। মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য নাটক সাজিয়েছে। আমি দ্রুত তার গ্রেফতার চাই। শুধু ১০ বছরের সাজা কার্যকর নয়, এই প্রতারকের ফাঁসি চাই।

প্রতিবেশী মুকবুল হোসেন বলেন, গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি, পাশেই পাকা মার্কেট, মাঠেও রয়েছে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া অঢেল সম্পদ। অথচ সে রিকশা চালায়! এটা তার প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। একজন খুনির জন্য দেশের মানুষ না জেনে সহানুভূতি দেখাচ্ছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে, আর আব্দুল্লাহর পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

আব্দুল্লার নানি রাবিয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, একজন খুনিকে নিয়ে দেশের মানুষ পাগল হইছে। অথচ সে আমার আদরের নাতি আব্দুল্লাহকে খুন করে আমাদের পাগল করছে। আমি মেহেদী (শামিম)-সহ পরিবারের সবার ফাঁসি চাই। তারা সবাই মিলে আমার নাতিকে মেরে ড্রামে ভরে রেখেছিল, আমিও তাদের মৃত্যু দেখে যেতে চাই।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আর রশীদ বলেন, আমি এ বিষয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। জেনেছি ওই যুবক একজন খুনি আসামি, জামিনে এসে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে শহরে গা ঢাকা দিয়ে আছে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Check Also

পরকীয়ার জেরে স্বামীকে ২২ টুকরো করে শহরে ‘ছেটালেন’ স্ত্রী

ফের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে ভারতের দিল্লিতে। দেশটিতে স্বামীকে হত্যার দায়ে এক নারীও ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *