ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
সেইসঙ্গে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তারকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সভাপতি তামান্না জেসমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার কিছু অনুসারী কর্তৃক ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে রোববার দিনভর উত্তপ্ত ছিল কলেজ ক্যাম্পাস।সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী পক্ষ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের দুজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বহিষ্কার দাবি করে। একই দিন সন্ধ্যার আগে কলেজ মিলনায়তনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিনসহ দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তামান্নাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে কলেজ প্রশাসন ও পুলিশের মাধ্যমে লেগুনায় করে ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়।
জয়-লেখকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পার পাচ্ছেন রিভা
শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের পাহাড় জমেছে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ছাত্রী নির্যাতনের অডিও ভাইরাল হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কাছের হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় কলেজের রাজিয়া বেগম হলের ২০২ নম্বর কক্ষে হলের চার ছাত্রীকে গালাগাল এবং নানা হুমকি দেন। পরে এই ঘটনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চান। তবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হল ক্যান্টিন, ওয়াইফাই কোম্পানি ও কলেজের ফুটপাতের দোকানেও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রিভার নেতৃত্বে শুধু আগস্ট মাসেই ওয়াইফাই প্রোভাইডার, কলেজ ও হল ক্যান্টিন এবং ফুটপাতের দোকান থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র অন্তর্কোন্দল রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য তামান্না জেসমিন রিভাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে এসব ঘটনার পরও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হাত গুটিয়ে আছে। রিভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এত বড় ঘটনার পর তাকে ন্যূনতম কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিভা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনেকেই মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী বলেন, এই যে শিক্ষার্থী নির্যাতনের এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এটার কোনো প্রভাব রিভার ওপর পড়েনি। সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর ব্যবস্থা কেনই বা নেবেন, রিভা জয়-লেখকের কাছের মানুষ বলেই তো তাকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বানানো হয়েছে। তারা আরও বলেন, এই ঘটনার যদি কোনো বিচার না হয় তাহলে রিভা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা ছাত্রলীগেরই ক্ষতি করবে।
অভিযোগ ওঠার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। সে বিষয়ে রিভা নিজে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। তার এই আচরণ ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ইডেন কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেত্রীরা কেন এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতিবিমুখ করবে। তাই এই ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রিভার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে তাদের মোবাইল ফোনে খুদেবার্ত পাঠানো হলেও তারা তার কোনো উত্তর দেননি।