প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অবৈধ সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেছেন অভিযুক্ত দম্পতি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার।
অনেক চেষ্টার পরও আলোচ্য দম্পতি এসব সম্পদ বিক্রিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইতোমধ্যেই এই দম্পতির সব সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেয় দুদক।
অন্যদিকে, আদালতও শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে রিসিভারও নিয়োগের কথা জানায়।
গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রামের সাবেক দাপুটে এ ওসি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ওসি দম্পতির বিরুদ্ধে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনেন মামলার বাদী দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক আতিকুল আলম। যা পরবর্তীতে তদন্তের জন্য দুদকের একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাকালে ওসির স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা নগরীর লালখান বাজারের হাই লেভেল রোডের ‘পরশ মঞ্জিল’নামে গড়া দুই গন্ডা দুই কান্তি চার দন্তক জায়গার ওপর ৬ তলা বাড়ি এবং কক্সবাজারের সদর থানার ঝিলংজা মৌজার বর্ধিত পৌরসভায় ৪ কাঠা ভিটে ভূমি বিক্রির তোড়জোর শুরু করেন অভিযুক্ত দম্পতি। যার প্রেক্ষিতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা নরুল ইসলাম গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এসব সম্পত্তিসহ ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা অন্য সম্পদ ক্রোক করার আবেদন করেন।
পরে আদালত ১ সেপ্টেম্বর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন। চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেবুন্নেসার আদালত এ আদেশ দেন।আদালতে আবেদন সূত্রে জানা যায়, ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা লালখান বাজারের ছয় তলা বাড়িটির মূল্য ধরা হয় ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৭৩৪ টাকা। যদিও বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া কক্সবাজারের ৪ কাঠা জমির ক্রয় মূল্য ৬০ লাখ ৩১ হাজার টাকা হলেও বর্তমানে ওই সম্পদের মূল্যও কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা দুদকের। এ দুই সম্পদ ছাড়াও ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা সৌদিয়া পরিবহনের নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে চলাচল করা দুটি বাসও জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। যার মূল্য ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া নগরীর ওয়াসার মোড়ের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ফেরদৌসি আক্তারের হিসাব নম্বরে থাকা ৩ হাজার ৮৩৭ টাকাও জব্দ করার আদেশ দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদুল হক মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা যেন হস্তাস্তর না করতে পারে, সে বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদগুলো ক্রোক করার আদেশ দেন। ইতোমধ্যে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের কার্যক্রমও চলছে।
দুদক বলছে, মূলত স্বামী ওসি শাহজাহানের সহযোগিতায় এবং স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে বৈধ করতেই স্ত্রীর নামে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারের ট্রেড লাইন্সেন দেখানোর ফন্দি করেন তারা। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন নথিপত্র কিছুই উপস্থাপন করতে পারেননি ওসি দম্পতি।