রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সম্প্রতি তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ, ছড়িয়ে পড়া অডিও–ভিডিওসহ নানা বিষয় নিয়ে তাঁরা কথা বলেন। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহী নগরের অলোকার মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একসঙ্গে তাঁরা দুজন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ‘সুপার এডিটেড’ বলে দাবি করেছেন সভাপতি সাকিবুল ইসলাম। তাঁর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণার মামলাটিও ষড়যন্ত্রমূলক। অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন দাবি করেন, তিনি ফেনসিডিল নয়, কোমল পানীয় পান করছিলেন। এডিট করে ফেনসিডিলের ভিডিও ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে কথা বলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে এক ছাত্রকে রাতভর মারধর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিজ দলীয় কর্মীকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে এসি লাগিয়ে থাকছেন। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর মাদকসেবনের একটি ভিডিও।
মাদক গ্রহণের ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে ও তাঁর সভাপতিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। তিনি সাংগঠনিক কাজে কাটাখালীতে এক আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি অস্পষ্ট ভিডিও ধারণ করে তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তিনি সেখানে কোমল পানীয় পান করছিলেন। সেই ভিডিওতে ফেনসিডিল লাগিয়ে তাঁর নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আবাসিক হলে এসি লাগিয়ে থাকেন না দাবি করে জাকির হোসেন বলেন, এসি লাগিয়ে থাকার বিষয়টি একেবারে মিথ্যা। যে কক্ষটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা তাঁর কক্ষ নয়। তাঁর কক্ষ নম্বর ২২৭। আর এসি আছে ২২৮ নম্বর কক্ষে। এ সময় একজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাহলে কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে? তবে এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান।
মিলন নামের এক ছাত্রকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এনে রাতভর নির্যাতনের বিষয়টি জাকির হোসেন অস্বীকার করেন। রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিজ দলীয় কর্মীকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ছাত্রলীগ কর্মী একজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে অশালীন আচরণ করছিলেন। এ কারণে তিনি তাঁকে শাসন করেছেন।
এরপর কথা বলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম। গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে খবর হয়েছে, তিনি একসময় ছাত্রদল করতেন। সম্প্রতি এক নারীর সঙ্গে তাঁর একটি আপত্তিকর কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর পরিবারের কেউ শিবির বা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত নয়। তিনি রাজশাহী কলেজে ছাত্রদলের কোনো কমিটিতে ছিলেন না।
এ সময় সাংবাদিকেরা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাকিবুল ইসলামকে বলেন, তাঁর ছাত্রদলে থাকার বিষয়টি রাজশাহী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও তখনকার কলেজ কমিটির ছাত্রদল নেতারা গণমাধ্যমে বলেছেন। এর জবাবে তিনি কতগুলো কাগজপত্র হাজির করে বলেন, এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি কখনো ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না। তাঁরা ষড়যন্ত্র করে এগুলো বলছেন। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এরপর সভাপতি সাকিবুল ইসলাম এক নারীর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনের অডিও নিয়ে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এটা তাঁর কণ্ঠস্বর নয়। প্রযুক্তির দ্বারা শব্দ বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। এটা সুপার এডিট করে বানানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাকিবুল এক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। আদালতের বিচারক মো. লিটন হোসেন মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর তাঁকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সভাপতি সাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্রমূলক। আপনার বিকাশে আমি ১০ হাজার টাকা দিয়ে দিলাম। বিষয়টা আপনি জানেন না। পরে পাঁচ দিন পর আপনার বিরুদ্ধে মামলা করলাম। এটা কি হবে, বলেন?’ তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে কারা ষড়যন্ত্র করছেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা জানেন। আপনাদের কাছে ভালো নিউজ করার জন্যও ফোন দেয়, খারাপ নিউজ করার জন্যও ফোন দেয়। তাই আপনারাই বলতে পারবেন, কারা ষড়যন্ত্রকারী।’
এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের ‘অপকর্ম’ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক আপন দাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বৃহস্পতিবার রাতেই রাজশাহী জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেবেন।