নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে অতিদরিদ্রদের ভিজিডি কার্ড করার জন্য জনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযাগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।উপজেলার মাঘান-শিয়াধার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রনক মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) মোহনগঞ্জ ইউএনও ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইউপি সদস্য রনক মিয়া ও তার সহযোগী বাদশা মিয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই কল রেকর্ডে শোনা যায়, ইউপি সদস্য রনক মিয়া তার সহযোগী বাদশাকে প্রতি ভিজিডি কার্ডে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য বলে দিচ্ছেন। ‘এত টাকা মানুষ দিতে চায় না’ বাদশার এমন জবাবে রনক বলেন, ‘তাহলে সাড়ে তিন হাজারের কম নিস না’।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কার্ডের বিপরীতে একজন দরিদ্র মানুষ প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাবেন বিনামূল্যে। যাচাই-বাছাই করে এ তালিকা চূড়ান্ত করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য।
অভিযোগকারী মাঘান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের জন্য মেম্বারের কাছে ভিজিডি কার্ড বানাতে গিয়েছিলাম। মেম্বার বলেছে, পাঁচ হাজার টাকার কমে কার্ড করা যাবে না। এভাবে অন্য সবার কাছে, কারও কাছে পাঁচ হাজার, কারও কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। আমার কাছে টাকা চাওয়ার প্রমাণ আছে।’
ইউপি সদস্যের সহযোগী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ‘কল রেকর্ডে মেম্বারের সঙ্গে কথোপকথনকারী ব্যক্তি আমিই। মেম্বার আমাকে ভিজিডি কার্ড করে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিতে বলেছিল। কিন্তু পরে আমি আর এ কাজ করিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাঘান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রনক মিয়া বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভিজিডি কার্ড করতে কারও কাছে টাকা চাইনি। অভিযোগকারী সুজনের সঙ্গে আমার পুরোনো বিরোধ আছে তাই সে এই বিষয়টাকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। নির্বাচনে পরাজিত আমার প্রতিপক্ষের লোকজন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’
কল রেকর্ড প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার (সহযোগী বাদশা) সঙ্গে অন্য বিষয়ে কথা হয়েছে, ভিজিডি কার্ডের টাকার বিষয়ে নয়। তবে এ বিষয়ে আর কোনো জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন, ‘রোববার (১৮ ডিসেম্বর) তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এখনো কাজ শুরু করিনি। কাল-পরশু দুই পক্ষকে ডেকে তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ চাইবো। পরে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবো।’
মোহনগঞ্জ ইউএনও ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।