সোহানুর রহমান, বয়স ২২, পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। বিয়ে করেছেন চারটি। এর মধ্যে কলহের জেরে মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে করা চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যা করেন। দুই বন্ধুর সহায়তায় লাশটি ভরেন প্লাস্টিকের ড্রামে। পরদিন সেটি নিয়ে রাখেন কর্মস্থলের গুদামে। সেখানে স্ত্রীর লাশ রেখে দুই দিন স্বাভাবিকভাবে কাজও করেন। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের সহায়তায় লাশভর্তি ড্রামটি রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান ঢাকায় তৃতীয় স্ত্রীর কাছে। যাঁকে গত জানুয়ারিতে বিয়ে করেন তিনি। এর আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা কালীবাড়ী সড়কের পাশ থেকে ড্রামভর্তি এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ খুনি হিসেবে ওই নারীর স্বামীকে শনাক্ত করে। এক সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হোটেল তাজমহল কমপ্লেপের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ওই নারীর পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ। এ ঘটনায় লাশ গুমে সহায়তার অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- সোহানুর রহমান, মো. রুবেল, মো. আশিক ও অটো রিকশাচালক মো. লিটন। তাঁদের চারজনই এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।
পুলিশ জানায়, নিহত নারীর নাম আতিয়া আক্তার (১৮)। তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার আতাউর রহমানের মেয়ে। দুই মাস আগে সোহানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সোহানুর চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আতিয়াকে নিয়ে থাকতেন পতেঙ্গার চরপাড়া এলাকার ভাড়া বাসায়। গত ১১ অক্টোবর রাতে জুয়া খেলে বাসায় আসেন সোহানুর। তাঁর সঙ্গে অন্য নারীর সম্পর্ক রয়েছে- এমন সন্দেহ করতেন স্ত্রী। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ হয়। এক পর্যায়ে গভীর রাতে আতিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সোহানুর। এরপর তাঁর দুই বন্ধু রুবেল ও আশিককে খবর দেন। তাঁরা এলে তিনজন মিলে আতিয়ার লাশ প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে রাখেন। সহকর্মীদের কাছে বাসা ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে পরদিন সেখান থেকে লাশভর্তি ড্রামটি তাঁর কর্মস্থলের গুদামে নিয়ে রাখেন। স্ত্রীর লাশ কর্মস্থলের গুদামে রেখে দু’দিন স্বাভাবিকভাবে কাজও করেন। এরপর নানি মারা যাওয়ার কথা বলে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে ড্রামটি সেখান থেকে নিয়ে যান। অটো রিকশাচালক লিটনের সঙ্গে ৩ হাজার টাকায় চুক্তি করে লাশভর্তি ড্রামটি নিয়ে কালীবাড়ি এলাকার রাস্তায় ফেলে দেন।
পতেঙ্গা থানার ওসি আবু জায়েদ মোহাম্মদ নাজমুন নুর সমকালকে বলেন, সোহানুর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার অপরাধী। ২২ বছর বয়সে সে বিয়ে করেছে চারটা। স্ত্রীকে খুন করে লাশ ড্রামে ভরে রেখে শাশুড়িকে খবর দেয়- আতিয়া অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। আতিয়ার ব্যবহূত মোবাইলটি সে সাগরে ফেলে দেয়।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের পর ওই এলাকার সব কারখানার ছুটি নেওয়া কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ করি। এর মধ্যে সোহানুরের খোঁজ পাই। সে ছুটি নিয়েছে আবার বাসাও ছেড়ে দিয়েছে বলে কর্মস্থলে জানিয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অনুসন্ধান করে দেখি, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সে যায়নি। এর মধ্যে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করেছে। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে লাশ গুমে সহায়তায় জড়িত অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।