Breaking News

খুলনার বাস না পেয়ে যশোর রেল স্টেশনে ভিড়

যশোর থেকে স্বল্প ও দূরপাল্লার সব পথের বাস চলাচল করলেও শুধু খুলনার পথে বাস বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা। খুলনায় যাওয়ার জন্য অনেক যাত্রীই ভিড় করেছেন যশোর রেলওয়ে স্টেশনে।

যশোরে হঠাৎ করে শুক্রবার দুপুর থেকে খুলনা অভিমুখী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা। এদিন সকালেও যশোর-খুলনা মহাসড়কের খুলনা ব্যাতীত অন্যান্য স্থান থেকে বাস এসেছে যশোরে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বলা হচ্ছিল, শুধু খুলনায় গণপরিবহণ চলাচল করবে না। কিন্তু হঠাৎ করে যশোর থেকে খুলনা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যশোর শহরে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা নারী ও পুরুষ।

বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনামুখী যাত্রীদের ভিড় দেখা যায় যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। এদিকে খুলনার পথে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভিড় করছেন রেলওয়ে স্টেশনে।

বেসরকারি সংস্থার কর্মী হুমায়ুন কবির চাকরির কারণে যশোরে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার বয়রায়। বন্ধের দিন বিধায় তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, “টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। শুনেছিলাম খুলনার সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে এ রুটে সব বাস বন্ধ থাকবে সেটা জানতাম না। বাস না পাওয়ায় আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। কর্মস্থলের কোয়ার্টারে চলে যাচ্ছি।”

বিপ্লব বিশ্বাস নামে আরেক যাত্রী বলেন, “অভয়নগর থেকে সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যশোর শহরে এসেছি। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফেরার জন্যে দুপুরে বাস টার্মিনালে এসে দেখি খুলনা রুটে কোনো বাস চলছে না। বড় ধরনের সংকটে পড়েছি।

“কারণ, ইজিবাইকে ভেঙে ভেঙে যেতে গেলেও ভাড়া লাগছে বাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ। আবার তা পাওয়াও যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।“

শনিবারে খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশকে ‘বাধাগ্রস্ত করতে ক্ষমতাসীন দলের চাপে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে’ এমন অভিযোগ বিএনপির কাছ থেকে এলেও; পরিবহন মালিকরা বলছেন, তারা তাদের নির্দিষ্ট কিছু দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছেন।

খুলনা-চুয়াডাঙ্গা লাইনের শাপলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সবদুল শেখ বলেন, “যশোর থেকে ১৭ পথে বাস চলাচল করছে। শুধু যশোর থেকে খুলনায় কোনো বাস চলাচল করছে না। বিএনপির সমাবেশের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।”

যশোর-খুলনা পরিবহন রুটের যশোর টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক মাছুম চৌধুরী বলেন, “মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বন্ধ হওয়ায় অফিসে বসে মানুষের ভোগান্তি দেখছি; তবে আমাদের কিছু করার নেই।”

যশোর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপড়িয়া বলেন, “সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে আমরা নিজেরাই খুলনাগামী সকল রুটে বাস বন্ধ রেখেছি। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীদেরও বাস ভাড়া দিচ্ছি না।”

বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু জানান, “শনিবার খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ হবে। সেখানে গাড়ি চলাচল করলে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। গাড়ি ভাঙচুরের আশঙ্কায় মালিক শ্রমিক মিলে যশোর-খুলনা পথে গণপরিবহন চলাচল দুই দিন বন্ধ রেখেছে।”

পরে তিনি বিকাল ৪টার দিকে বলেন, “বিভাগীয় বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে শুক্রবার ও শনিবার পরিবহণ ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।”

যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, “যশোরের কোনো বাস বা মাইক্রোবাস আমাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।“

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগের নির্দেশেই খুলনাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লঞ্চ-ট্রলার এবং ঘাটও বন্ধ করে রেখেছে তারা। সরকার যে ষড়যন্ত্র করবে তা আগেই ধারণা ছিল। তবে বিএনপির বিকল্প কৌশল রয়েছে। সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘাটানো হবে। বিএনপির প্রতিটি কর্মী শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে যাবেন।”

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *