Breaking News

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঠিকানা ও টাকা নিচ্ছে একটি চক্র

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) এলাকায় অনলাইন হোল্ডিং নম্বর ডিজিটাল প্লেট বন্টন কার্যক্রমের নামে বাসাবাড়ি থেকে টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। যদিও সিটি করপোরেশন দাবি করছে, ডিজিটাল প্লেট বন্টনে তাদের এ ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই। এটি একটি প্রতারক চক্র, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন তারা। কে বা কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তাও নিশ্চিত করতে পারেনি রসিক কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু লোকজন নিজেদেরকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘অনলাইন হোল্ডিং নম্বর ডিজিটাল প্লেট’ দেওয়ার কথা বলে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার সময় তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও রংপুর সিটি করপোরেশন লেখা ও মনোগ্রাম সম্বলিত একটি করে রশিদ (রিসিভ) কপিও দিচ্ছে। ওই রিসিভ কপিতে ফিল্ড সুপারভাইজারের স্বাক্ষর থাকলেও নেই নাম। এমনকি সিটি করপোরেশন থেকে এভাবে টাকা আদায়ের পক্ষে নেই কোনো দিকনির্দেশনাও।

নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম জানান, গত ১০ অক্টোবর সোমবার তার বাড়িতে দুইজন ছেলে এসে অনলাইন হোল্ডিং নম্বর ডিজিটাল প্লেট প্রদানের কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে একটি রিসিভ কপি হাতে ধরিয়ে দেন। আগামী মাসে হোল্ডিং নম্বরসহ নতুন ডিজিটাল প্লেট প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যান তারা।

শুধু আজিজুল ইসলাম নয়, একইভাবে মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করে যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী পরিচয় দেওয়া ওই সব লোকজন। নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার ছাবিয়া বেগম, মনোয়ারা বেগম ও আব্দুস সালাম জানান, মাস দুয়েক আগে তাদের বাড়িতে গিয়ে ডিজিটাল হোল্ডি প্লেট নম্বর প্রদানের কথা বলে ১০০ টাকা করে নিয়ে গেছেন কয়েকজন ছেলে। এরপর থেকে তাদের কাউকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত কোনো হোল্ডিং নম্বরের ডিজিটাল প্লেটও কেউ এসে দিয়ে যায়নি।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায়ের এ কার্যক্রম নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের কর আদায় শাখায় যোগাযোগ করা হলে সহকারী কর আদায়কারী (১৭নং ওয়ার্ড) হুমায়ুন কবির খোকন বলেন, আমরা শুনেছি কিছু তরুণ বাসা বাড়িতে গিয়ে রিসিভ দিয়ে টাকা নিচ্ছে। তবে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের পরিচয় দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।

প্রতারক এ চক্রটিকে টাকা না দেওয়াসহ নগরবাসীকে এই ভুয়া কার্যক্রম সম্পর্কে সতর্ক করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রসিকের কর আদায় শাখার প্রধান মোহাম্মদ আলী।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কে বা কারা ‘অনলাইন হোল্ডিং নম্বর ডিজিটাল প্লেট বন্টন’ কার্যক্রমের নামে প্রতারণা করছে, তা আমার জানা নেই। তবে সিটি করপোরেশন থেকে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মেয়র মহোদয়কে জানানো হয়েছে। প্রতারক চক্রটিকে চিন্হিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি প্রতারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমাদের এরকম কোনো কার্যক্রম নেই। যারা এভাবে প্রতারণা করে নগরবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, তাদেরকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হোক। যথাযথ প্রমাণ ও চক্রটিকে চিন্থিত করা গেলে আমরাও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব। তবে নগরবাসীকে এ ধরনের চক্রের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

প্রসঙ্গত, দেশের দশম সিটি করপোরেশন হিসেবে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর সিটি করপোরেশন। ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনের মধ্যে রংপুর সদরের ১০টি, কাউনিয়ার সারাই ও পীরগাছার কল্যাণীসহ ১২টি ইউনিয়ন মিলে ১১২টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ ও ৫টি আংশিক রয়েছে। ক্যান্টনমেন্টকে সিটি করপোরেশনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই সিটি করপোরেশনের ৪৪২টি মহল্লা রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে গাজীপুর ও ঢাকার পরই রংপুর সিটি করপোরেশনের স্থান।

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *