Breaking News

প্রধানমন্ত্রী পারমিশন দিয়েছেন, যেখানে পাব সেখান থেকে বালু তুলব

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্ডার নিয়ে বালু তুলছি। আর কারও কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে না। সাংবাদিক, ইউএনও এরা কারা? এদের তো দু’টাকা হলে কেনা যায়। এদের কাছে আবার কীসের পারমিশন? প্রধানমন্ত্রী নিজেই পারমিশন দিয়েছেন। যেখানে বালু পাব সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাব।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর নিচে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে এসব কথা বলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দাবিকারী ছামিউল ইসলাম ছাবের নামে এক ব্যক্তি।

সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতিপত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন। পারমিশন না দিলে আমরা বঙ্গবন্ধু আর ওয়াজেদ মিয়ার ছবি লাগিয়ে বালু নিয়ে যেতে পারি?’

এ সময় ছামিউল ইসলাম ছাবের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ছবি তোলো, প্রধানমন্ত্রীর কাজে বাধা দাও। তুমি জানো এর পরিণতি কী হবে? তোমার এত বড় সাহস, সাংবাদিকতা তোমার…… (প্রকাশের অযোগ্য) দেব।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে তিস্তা থেকে অপরিকল্পিতভাবে দিন-রাত বালু তুলছে দুর্বৃত্তরা। ফলে তিস্তার ভাঙনে বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় লোকজন বালু উত্তোলনে বাধা দিলে তাদের দেওয়া হচ্ছে হুমকি, ধামকি। প্রশাসনের লোকজন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তিস্তা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুর পাশের চরে লাগানো আমন খেতে কাজ করছিলেন মহিপুর এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বালু উত্তোলন করার সময় আমরা অনেকবার বাধা দিয়েছি। তবুও বালু তুলছে তারা। রাস্তা কেটে বালু তোলায় তিস্তায় পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমি ও আশপাশের ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে। কয়েকদিন আগেই তিস্তায় সব হারিয়েছি। আমাদের আর কত হারাতে হবে?

ওই সেতুর পাশের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, রংপুর শহর থেকে কিছু লোক এসে এলাকার ফুয়াদ হোসেনের সহযোগিতায় বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাধা দিয়েছিলাম। তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনমুতি নিয়েছে। আমাদের তারা সরকারের লোক বলেও পরিচয় দেয়। এখানে চলাচলের রাস্তা কেটে বালু পরিবহন করায় আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ধনজিৎ ঘোস তাপস বলেন, ছাবিউল ইসলাম নামে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে কখনো কেউ সভাপতি ছিল না। রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রামানিক। বঙ্গবন্ধুর ছবি ও ডাক্তার ওয়াজেদ স্যারের ছবি টাঙ্গিয়ে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের প্রতারণা একেবারেই ন্যাক্কারজনক কাজ। আমরা ছাবিউল ইসলাম ছাবের নামে কাউকে চিনি না। আশা করছি স্থানীয় প্রশাসন ওই ভুয়া নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অনন্ত ৫০ জন স্থানীয় লোকজন জানান, বালু পরিবহনের জন্য ফসল রক্ষা বাঁধ, যেটি স্থানীয় লোকজনের চলাচলের একমাত্র রাস্তা, কেটে ফেলা হয়েছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার বিঘা জমি এবং প্রায় তিন হাজার ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন বলেন, বালু তোলা সম্পূর্ণ অবৈধ। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর ওই স্থান থেকে বালু পরিহবনকারী ৫টি ট্রলি ও ট্রলির সঙ্গে থাকা ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *