সাভারের আশুলিয়ায় ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নিজ ফ্ল্যাটেই চুরির মামলার আসামি করা হয়েছে রাজু আহম্মেদ নামে এক ফ্ল্যাট মালিককে। ফ্ল্যাটের অন্য দাবীদার দুলাল হোসেন ও আছমা সুলতানা দম্পতির এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক সুযোগ নিয়ে রাজুকে এই মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য দুলাল হোসেন ও তার স্ত্রী আছমা সুলতানার মামলা করার আগেই বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচট এলাকা থেকে আটক করা হয় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রাজু আহম্মেদকে। পরদিন আশুলিয়া থানায় মামলা হয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও ফ্ল্যাটের অন্য মালিকদের অভিযোগ, বাদী ও আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউল ইসলামের বাড়ি একই গ্রামে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য থাকায় রাজু আহম্মেদকে চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
রাজুর স্ত্রীর আসমা আহম্মেদ বলেন, ‘গাজীরচট এলাকার চতুর্থ তলায় আমার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটটি পাশের ফ্ল্যাটের দুলাল হোসেন ও তার স্ত্রী আছমা সুলতানার কাছে বিক্রির জন্য ১০ হাজার টাকা মৌখিক বায়না করি। কথা ছিল বাকি সাত লাখ টাকা পরে দেবে। কিন্তু টাকা না দিয়েই দুলাল-আছমা দম্পতি গোপনে ফ্ল্যাটটি দখল করে কাজ করছিল। প্রতিবাদ করলে আমাদের মারধর করতে আসেন। অনেকবার থানায় গেলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য তাদের ডাকা হলেও তারা বসেননি। গত বুধবার তারা জোরপূর্বক ফ্ল্যাট দখল করতে আসলে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুলালের স্ত্রী থানায় ফোন করে পুলিশ ডেকে আনেন। তখন রাজুকে ধরে নিয়ে যান এসআই মিলন ফকির। পরদিন চুরি, জখম, ভাঙচুরের মামলা করেন দুলালের স্ত্রী আছমা। ’
ওই ভবনের আরেক ফ্ল্যাট মালিক সাবেক সেনাসদস্য গোলজার হোসেন বলেন, ‘আমরা আটজন সেনাসদস্য নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে চারতলা এই বাড়িটি নির্মাণ করেছি। পুরো বাড়ি আমার তত্ত্বাবধানেই হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর অংশীদারদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চারতলার দুলাল-আছমা দম্পতি জোর করে নিচের একটি দোকান ও নিচতলার আরেকটি ফ্ল্যাট দখল করে ভাড়া আদায় করছেন। ’
মামলা করার বিষয়ে বাদী আছমা সুলতানা বলেন, ‘রাজু আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে আমার স্বামী, ছেলে-মেয়েসহ আমাকে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। স্বর্ণ, টাকা নিয়ে গেছে। তাই মামলা করেছি। ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছি। বিশ্বাস করে স্ট্যাম্প কিংবা লিখিত কোনো ডকুমেন্ট রাখিনি। এটাই আমাদের ভুল হয়েছে। তারা আমাদের নামে ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন জায়গা অভিযোগ দিলেও তার কোন সত্যতা মেলেনি। ’
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব। চেয়ারম্যান বলেছিলেন মীমাংসা করে দেবেন। কিন্তু তারা (রাজু আহম্মেদ) শোনেননি। ’
মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি সত্য নয় বলে পাশের ফ্ল্যাটের মালিক বলছেন, এমন প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ দিলেই তো হলো না। আমরা তদন্ত করে যা প্রমাণ হবে তাই হবে। মামলার তো আর চার্জশিট হয় নাই। অভিযোগ অনেকে অনেক কিছু দেয়। ’
বাদীর সঙ্গে সখ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়তি সুবিধা পেলে অনেক আগেই পেত তারা। এতদিন কেন সে বাড়তি সুবিধা পায় নাই?’