Breaking News

বাদ পড়তে পারেন দেড়শর মতো এমপি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহজ হবে না এটা ধরে নিয়েই দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অযোগ্যদের নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে লড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রার্থী নির্বাচনে আগে থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ। তাই এবার মনোনয়ন পেতে হলে দলের নেতাদের চারটি যোগ্যতা থাকতে হবে। বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) ক্ষেত্রেও এ শর্ত প্রযোজ্য হবে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

যোগ্যতাগুলো কী জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তির স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা কেমন, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু, এমপি হলে দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম-অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছেন কিনা ও তার কারণে দলে উপদল সৃষ্টি হয়েছে কিনা। এসব বিবেচনায় যারা এগিয়ে থাকবেন তারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এটাই চূড়ান্ত। তেমনি এই চার বিষয়ে যাদের অবস্থান তলানীতে তারা মনোনয়ন পাবেন না। তবে ব্যক্তি ভাবমূর্তি ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক এই দুটি যোগ্যতা থাকতেই হবে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার নৌকা প্রতীক পাওয়ার যোগ্য হবেন তারাই যাদের এই চার যোগ্যতা রয়েছে। যাদের এই চার যোগ্যতার ঘাটতি থাকবে তারা যত নামিদামিই হন নৌকার কান্ডারি হতে পারবেন না। এই চার যোগ্যতায় উত্তীর্ণ না হতে পারলে বর্তমান এমপিদেরও মনোনয়ন দেবেন না দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা আরও বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই এ বার্তা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী এবার নতুনের জয়-জয়কার থাকারই সম্ভাবনা বেশি।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলটির কয়েক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গেও আওয়ামী লীগ সভাপতি কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পাস করাবেন এ ধারণা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। এবারের নির্বাচনে সবাইকে নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। দলের সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় কার কী অবস্থান তা জানতে জরিপ চলছে জানিয়ে দলীয় সভাপতি বলেন, ‘এমপিরা কর্মগুণে মনোনয়ন পাবেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা এমপিরা নির্বাচন কী তা বোঝেন না, তাদের বুঝতে হবে।’

ওই নেতারা বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাঠে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের প্রতীকী শাস্তির ব্যাপারে আলোচনা হয়। তবে যারা চিঠি দিয়ে অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইবেন, তাদের ক্ষমা করা হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য।

আগামী নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আলোচনায় আছে। তারা বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বিভিন্ন মাধ্যমে এমপিরা বাদ পড়বেন, বেশি সংখ্যায় নতুনরা আসবেন এমন গুঞ্জন শোনা যায়। কার্যত ফলপ্রসূ কিছু হয় না। ‘যে লাউ সেই কদুই’ থেকে যায়। পরিস্থিতি এমন যে, আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্ত দলের কর্মীরাই বিশ্বাস করে না। তাদের দাবি, ২০১৪-২০১৮ সালের নির্বাচনেও বাদ পড়ার কথা উঠেছিল। দেখা গেছে, বিতর্কিত কাউকে বাদ না দিয়ে জঘন্য কাজের জন্য অভিযুক্ত এমপিরা আবার মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ বিষয়ে ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার অবশ্যই অনেক চেঞ্জ (পরিবর্তন) হবে।’

বাদ দেওয়া না দেওয়ার প্রসঙ্গ ও কর্মীদের অনাস্থার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন ও সম্পাদকমণ্ডলীর তিনজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কমপক্ষে ১০০ এমপিকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভেতরের একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসে। তারা দলীয় প্রধানকে এ বার্তা দিয়েছিলেন যে, এখন কোনো এমপিকে বাদ দিলে তারা দলের প্রার্থীকেই হারাতে উঠেপড়ে লেগে যাবে। এই নিয়ে আরও কিছু যুক্তিও তারা শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন। ঝামেলা এড়াতে তিনি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

ওই পাঁচ নেতার দৃঢ় বিশ্বাস, আগেরবার সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছিয়ে গেলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদের দেড়শ এমপি বাদ পড়বেন। তারা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এবারের এমপি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনো মহলই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ প্রত্যেক এমপির ব্যাপারে বারবার তদন্ত করা হচ্ছে। নির্ভুল প্রতিবেদন পেতে এই উদ্যোগ।

ওই নেতারা আরও জানান, দলের প্রত্যেক এমপির কর্মকাণ্ড নিয়ে আলাদা বই আকারে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এ ছাড়া দলের অন্য নেতাদের বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখছেন।

জানা গেছে, চার যোগ্যতা কার আছে, কার নেই তা যাছাই-বাছাই করতে ইতিমধ্যে মাঠে জরিপ চলছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭-৮ মাস আগে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ দলীয় এমপিকে আগামী নির্বাচনে মনেনয়ন দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, বাদ পড়ার কারণ কী হবে তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে দল প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।’ বর্তমান এমপিদের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মনোনয়ন পাবেন না বলে তার বিশ্বাস।

Check Also

ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছেন সাবেক তথ্য ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *