Breaking News

বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে আরেক ধাপ এগিয়ে খুলনা

চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর এবার বিএনপির গণসমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে আরেক ধাপ এগিয়ে খুলনা। চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশে যেতে বিক্ষিপ্ত হামলা ও বাধা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ময়মনসিংহে হামলা ও বাধার সঙ্গে এক ধাপ এগিয়ে সড়কপথে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পূর্বঘোষণা ছাড়াই। এবার খুলনায় সমাবেশের দুই দিন আগেই বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা এল।

তবে খুলনায় বাস চলাচল বন্ধের অভিনব কৌশল নিয়েছে ‘খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি’। গতকাল বুধবার দুপুরে সংগঠনটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেছে, ‘সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে।’

আরও পড়ুন
বিএনপির বড় জমায়েত ঠেকানোর চেষ্টায় আ.লীগ
বিএনপির বড় জমায়েত ঠেকানোর চেষ্টায় আ.লীগ

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২২ অক্টোবর নগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির গণসমাবেশ। মূলত এ সমাবেশে জনসমাগম ঠেকানোর উদ্দেশ্যেই ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সব রুটের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান। তিনি খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন, মিটিংয়ে ছিলেন না। তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলেই সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করার দাবিতে ওই দুই দিন খুলনা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন
খুলনায় বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত
খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস মালিক সমিতির একাধিক নেতা জানান, সব রুটের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে মালিক সমিতির সবাই একমত ছিলেন না। কার্যত ‘রাজনৈতিক চাপে’ তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

মালিকদের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে দুই দিন বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন খুলনার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। খুলনা থেকে ১৮টি রুটে দুই শতাধিক বাস চলাচল করে। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সমাবেশ বানচাল করতে ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে বাস মালিক ও শ্রমিকেরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি গফ্ফার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মিটিংয়ের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সবাই বাস চলাচল বন্ধ করার পক্ষে নয়। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নেরও সবাই এ সিদ্ধান্তে একমত ছিলেন না বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, কোনো সংগঠন যদি চায় তাহলে বাস চালাবে। তবে কোনো অঘটন ঘটলে এর দায়ভার কেউ নেবে না।

খুলনা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২২ অক্টোবরের সমাবেশ উপলক্ষে ১৮টি উপকমিটি করে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলায় কর্মিসভা, প্রস্তুতি সভা হয়েছে। ১৫ অক্টোবর থেকে জেলা ও উপজেলায় কয়েক লাখ প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অংশ নেবেন বলে আশা করছেন দলের নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশ সমন্বয় করছেন। কিন্তু হঠাৎ সমাবেশের এক দিন আগে থেকেই খুলনায় পরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা নেতা-কর্মীদের বিপাকে ফেলেছে।

এর মধ্যে সমাবেশ সামনে রেখে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। তিনি গতকাল নগরের কেডি ঘোষ রোডের কার্যালয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

শামসুজ্জামান বলেন, যশোরে গত মঙ্গলবার কোনো রকম পরোয়ানা ছাড়া ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাগেরহাট থেকেও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সমাবেশ বানচাল করতে যানবাহন চলাচল বন্ধের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আর হরতাল ডাকি না। আমাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য সরকারই হরতাল ডাকে।’

খুলনায় বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণায় সমাবেশের প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়েছে বাগেরহাট, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলায়। অতীতে বিএনপির সমাবেশে উপস্থিতি কমাতে বাস চলাচল বন্ধ করাসহ বাগেরহাটের সড়কে তল্লাশি, রূপসা খেয়াঘাটে নৌকা-ট্রলার চলাচল বন্ধ করারও দৃষ্টান্ত আছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকলে প্রয়োজনে হেঁটে সমাবেশে যাবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোজাফফর রহমান আলম।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের পর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছে। ২২ অক্টোবর খুলনার পর ২৯ অক্টোবর রংপুরে সমাবেশ হওয়ার কথা। এরপর ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। তবে সরকারি দলের বাধাবিপত্তি এড়িয়ে এসব সমাবেশ শেষ পর্যন্ত কতটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা যাবে, তা নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এর আগে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে গণসমাবেশের আগের রাতে নেতা–কর্মীদের বাসায় পুলিশি অভিযানের অভিযোগ করে দলটি। নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি থেকে কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। ময়মনসিংহেও কর্মসূচিতে যেতে নেতা–কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। হুমকি-বাধা, লাঠি নিয়ে সড়কে অবস্থান ও যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরও নেতা–কর্মীদের একটি অংশ আগের রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছে যান। অনেকে যান নৌপথে।

অবশ্য গতকাল খুলনার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণার পর কোনো প্রতিবন্ধকতাই বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশের জনস্রোতকে রুখতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি দলের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিবন্ধকতা, কোনো হরতাল মানব না, আমরা কোনো কারফিউও মানব না, আমরা সেখানে (সমাবেশ) উপস্থিত হবই।’

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি, বাগেরহাট]

Check Also

ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছেন সাবেক তথ্য ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *