মাথায় আঘাত করে জখম এবং ঘুষি দিয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার অভিযোগে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীদের নামে দুটি আলাদা মামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ২৫ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটিতে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আটক ২৪ নেতাকর্মীকে আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানা পুলিশ।
জখম আর ঘুষি দিয়ে দাঁত ভাঙায় ছাত্রলীগের দুই মামলা
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির পর আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান শাহবাগ থানায় মামলা দুটি করেন। মামলা নম্বর ১৪ ও ১৫।
এর আগে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ‘বহিরাগত’ স্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থলে থাকা চেয়ার ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পুড়িয়ে দেয়া হয় ব্যানার-ফেস্টুনও। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় দুটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৪ ও ১৫। দুটি মামলার আসামি একই।
আসামিদের মধ্যে একজনকে পলাতক দেখানো হয়েছে, বাকি ২৪ জনকে আটক করে সকালে সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে শাহবাগ থানার আওতাধীন এলাকায় হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের সামনে একজনের মাথায় আঘাত করে জখমের ঘটনায় একজন মামলা করেছেন। অন্যজন মামলা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তাকে ঘুষি দিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলার অভিযোগে।’
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত।
সংগঠনটির নেতাকর্মীদের থানায় আটকে রাখার প্রতিবাদে পল্টন থেকে শাহবাগ থানা অভিমুখে গণ অধিকার পরিষদের ডাকা স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি পল্টন থেকে পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের দিকে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন: মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। তাদের মধ্যে মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার।