মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত শহীদুল ইসলাম শাওনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার রাতে যুবদল কর্মীর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে গোটা মুরমা এলাকা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার সকালে শাওনের বাড়ি গিয়ে শোনা যায় কান্নার রোল। শোকের মাতম চলছে পরিবারে। বসতঘরের এক কোণে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। কোলে আট মাসের সন্তান আবরার ভূইয়া সাহাদ। অবুঝ এ শিশু সন্তান জানে না তার বাবা আর নেই। আর কখনই বাবা তাকে কোলে নিয়ে আদর করবে না, চুমু খাবে না।
তার শোকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা লিপি আক্তার। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রতিবেশীরা। তবে ছেলে হারা মাকে কোনো ভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না তারা।
মা লিপি আক্তার বলেন, আমার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সবার বড় ছিল শাওন। অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসারের হাল ধরে। বুধবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বলেছিল ঘুরতে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। কই আমার ছেলে জীবিত ফিরে এল না। আমার ছেলেডারে গুলি করে মেরে ফেলল। বাড়িতে এল লাশ হয়ে। আমার আট মাসের নাতি সাহাদ বাবাকে চেনার আগেই হারায়ে ফেলল।
শাওনের স্ত্রী সাদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৮ মাস আগে সন্তান জন্মের পর আমি বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলাম। গত বুধবার বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার দুই দিন আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন শাওন। কথা ছিল কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে ও সন্তানকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসবে শাওন।’
এ সময় সাদিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দুদিন পরই আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসবে বলেছিল। এ জন্য বাজার-সদাই করবে। তাই কাজে খুব মনোযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমাকে আর নিতে এল না। এখন আমি সন্তান নিয়ে নিজেই চলে আসলাম। শাওন তো আর এল না।’
জেলা সদরের মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার নিহত যুবদল কর্মী শাওনের প্রতিবেশীরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই বিএনপির রাজনীতি তার ভালো লাগত। যখন যেখানে দলের সভা-সমাবেশ হতো, তখন সেখানে ছুটে যেতো। গত বুধবারও বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়েছিল সে। কিন্তু এবার আর মা-বাবার বুকে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসা হলো না। স্ত্রী-সন্তানের হাসিমুখ দেখা হলো না তার।’
মুরমা গ্রামের ছোয়াব আলী ভুইয়ার বড় ছেলে শাওন অটোরিকশা চালাতেন। অভাব-অনটনের সংসারে হাসি ফোটাতে বাবার সঙ্গে অল্প বয়সেই চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় শাওন অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন। ২০২১ সালে পার্শ্ববর্তী টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের সাদিয়া আক্তারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুরালয় ও নিজ বাড়ি-দুই মিলিয়ে জীবন যাপন করে আসছিলেন।