Breaking News

‘আমরা পারিবারিকভাবেই সচ্ছল, ২০/৩০ হাজার টাকার ফ্লাট নিয়ে অভিযোগ হাস্যকর’

সম্প্রতি ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে নানা ‘অনিয়মের’ তালিকা জমা দেন ক্ষুব্ধ কয়েকজন নেতা। অভিযোগপত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সহসভাপতিসহ শতাধিক নেতা অভিযোগ জানানোর পক্ষে সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কামাল খান, যিনি এ বিষয়টির সমন্বয় করছেন। তাদের দাবি, দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে লিপ্ত জয়-লেখক।

‘অনিয়মের’ তালিকা জমা দেয়ার পর ক্ষুব্ধ এক নেতা বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এসেছিলাম। আপনারা জানেন, আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ৩০তম সম্মেলনের নির্দেশনা এসেছে। সেই মোতাবেক আমরা আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। সেই প্রেক্ষিতেই আমাদের সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলতে আমাদের নেত্রীর কাছে এসেছি। নেত্রীর কাছে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া আছে সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি। আমরা যেহেতু ছাত্রলীগ করি তাই আমাদের কিছু আবেগমিশ্রিত কথা রয়েছে সেসব বিষয়ে কথা বলতে এসেছি।

ক্ষুব্ধ ওই নেতা বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে ৩০তম সম্মেলনের তারিখ চাই, এটাই আমাদের দাবি। এছাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছু সারাংশ তুলে ধরেছি। আমরা এখানে সিনিয়র কিছু নেতা আসলেও যে পত্র নিয়ে এসেছি সেখানে এক তৃতীয়াংশের স্বাক্ষর রয়েছে।

ক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের কোনো সীমা নেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মাস পরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির পুরো তিন বছর মেয়াদে মাত্র একটি সভা হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, জয়-লেখকের সময়ে তারা যে সমস্ত কমিটি দিয়েছেন সেগুলোর ৯০ শতাংশ কমিটিই দুর্বল। এছাড়াও কমিটিগুলোতে অছাত্র, বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত অপরাধীদের স্থান দিয়েছেন। তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমানতের খেয়ানত। এছাড়া যে কমিটিগুলো হচ্ছে সেগুলোতে অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ব্যক্তিগত চলাফেরার বিষয়ে অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, জয়-লেখক নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। তারা হল ছেড়ে দুটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন। তাদের একাধিক গাড়ি ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবচেয়ে বড় সংগঠন। প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন এটি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ৩০১ সদস্যের কমিটির সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। করোনাকালেও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশংসাও হয়েছে। এখন আমার কথা হচ্ছে ৩০১ সদস্যের কমিটির ভেতর ৫ থেকে ৬ জন বিভিন্নভাবে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, সেটাই বিষয়।

জয় বলেন, আমরা দেখছি কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই সংবাদ ছড়িয়েছে যে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করা হয়েছে। সত্যি বলতে মিথ্যা নালিশ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে যে আমি একজন শিক্ষার্থী এবং তারপর আমি ছাত্রলীগের সভাপতি। কিন্তু আমার তো একটা পরিবার আছে। ২০/২২ হাজার টাকা ভাড়ায় আমি এখন একটা ফ্ল্যাটে থাকি। সেখানে যদি অভিযোগকারীরা মনে করে যে এই ফ্ল্যাটে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার আমার যোগ্যতা নেই, তবে সেটা তারা ভুল ভেবেছেন। কারণ আমি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই পারিবারিকভাবেই এই জায়গাটাকে মেইনটেইন করে চলছি।

তিনি বলেন, তারা (অভিযোগকারীরা) বিভিন্নভাবে ভুল অভিযোগ দিয়েছেন। এই ৫ থেকে ৭ জন যে উদ্দেশ্য নিয়ে অভিযোগ দিচ্ছেন, সেটি যদি সত্য হয়, তবে আমি শাস্তি মেনে নেব। আমি মনি করি, যারা অভিযোগ দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য সৎ না। জামায়াত-বিএনপি যেভাবে ছাত্রলীগকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই কাজটাই তারা (অভিযোগকারীরা) করছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি যদি কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত হই, তবে অবশ্যই আমাদের নেত্রী ব্যবস্থা নেবেন। কারণ এদেশে যারাই দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও কিন্তু ২ বছর মেয়াদের আগেই বাদ হতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসেন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন ও রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই সময় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি দুই শীর্ষ নেতাকে পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে।

Check Also

ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছেন সাবেক তথ্য ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *