১৫ আগস্ট দুপুরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সাথে বঙ্গভবনে কর্ণেল তাহের বৈঠক করেন। কর্ণেল তাহের এর প্রস্তাব ছিলো – শেখ মুজিবের লাশটি, বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া। মুজিবকে কবর দেয়ায় জাসদ কর্মী নঈম জাহাঙ্গীর এর নিকট বিরক্তিও প্রকাশ করেছিলেন,কর্ণেল তাহের। জাসদের পক্ষ হতে একটি লিফলেটও ছাপা হয়, শিরোনাম ছিলো -“ খুনি মুজিব খুন হয়েছে- অত্যাচারীর পতন অনিবার্য “।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর, ১৫ আগস্ট ভোরে-রেডিও স্টেশনে নিজ উদ্যোগে চলে যান, কর্ণেল তাহের, সাথে ছিলেন – হাসানুল হক ইনু।কর্ণেল তাহের বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী-কর্ণেল রশিদকে সেইসময়ের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন।পরামর্শ মতন তিনবাহিনীর প্রধানদের রেডিও স্টেশনে নিয়ে এসে আনুগত্য প্রকাশ করার ব্যবস্হা করেন খুনিরা। হাসানুল হক ইনু সাথেই ছিলেন।
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ পল্টনে সমাবেশ শেষে সেইসময়ের জাসদ সভাপতি মেজর জলিল ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে একটি মিছিল মিন্টু রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসার সামনে বিক্ষোভ করে।একপর্যায়ে পুলিশ – রক্ষাীবাহিনী ও জাসদ কর্মীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। জাসদের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন -জাসদের পক্ষ হতেই প্রথম গুলি ছোঁড়া হয়। প্রথম গুলি ছুড়েছিলেন – হাবিবুল হক বেনু। হাসানুল হক ইনুর ছত্রছায়ায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে- হাবিবুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন।
এক
——————————————————————–
গোটা মানবজাতি করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংকিত। কোথায় শেষ, জানি না।হাতে হাত মিলিয়ে (ঐক্য অর্থে,হাত না মেলানো উচিত) এই দুর্যোগ প্রতিরোধ করাই কর্তব্য। কিছু মানুষ আছেন,যারা এর ধারে কাছে আসে না, সময় জ্ঞান বির্বজিত।তাদের নিয়ে দেশ জাতি সবসময়ই সমস্যার মধ্যে বসবাস করে।
———————————————————————–
নৌকায় চড়ে মশাল জ্বালিয়ে জাতীয় সংসদে প্রবেশ। কিন্তু, মন্ত্রীত্বের স্বাদ না পেয়ে বিপর্যস্হ। অতঃপর, তথ্যমন্ত্রীর আসনে আসীন হয়ে, স্বৈরাচারী এরশাদ এর তথ্যমন্ত্রী – আনোয়ার জাহিদকে, কিন্তু, পেছনে ফেলে – এমন সব বক্তব্য দেয়া-ক্ষোভে- দুঃখে- রাগে, দলের একটি অংশ, দল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়া।
————————————————————————-
বাংলাদেশ এর বিভিন্ন দুর্যোগকালে -দল- রাজনীতিতে বিতর্কিত ভুমিকা রেখেছেন। কোথায় যান আর কি যে বলেন,তা তার সহকর্মীরাই বুঝতে পারে না।
দুনিয়ার ভরা দুঃসময়ে সবকিছু বাদ দিয়ে জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পর- জাসদ প্রথম প্রতিবাদ করেছে।”
————————————————————————–
এটা আবার কি জন্যে বলা,মহান রাব্বুল আল আমিনই জানেন। সাবেক তথ্যমস্ত্রীর কর্মকান্ড নিয়ে তথ্য যা পেয়েছি – তা নিম্নরূপ –
————————————————————————-
১.১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ পল্টনে সমাবেশ শেষে সেইসময়ের জাসদ সভাপতি মেজর জলিল ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে একটি মিছিল মিন্টু রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসার সামনে বিক্ষোভ করে।একপর্যায়ে পুলিশ – রক্ষাীবাহিনী ও জাসদ কর্মীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। গুলিতে নিহত হন- জাসদের ১৭ জন কর্মী। পরবর্তীতে- জাসদের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন -জাসদের পক্ষ হতেই প্রথম গুলি ছোঁড়া হয়। প্রথম গুলি ছুড়েছিলেন – হাবিবুল হক বেনু। হাসানুল হক ইনুর ছত্রছায়ায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে- হাবিবুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন। জলিল – রব কেউ- ই কিছু জানতেন না।
————————————————————————–
২. বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর, ১৫ আগস্ট ভোরে-রেডিও স্টেশনে নিজ উদ্যোগে চলে যান, কর্ণেল তাহের, সাথে ছিলেন – হাসানুল হক ইনু।কর্ণেল তাহের বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী-কর্ণেল রশিদকে সেইসময়ের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন।পরামর্শ মতন তিনবাহিনীর প্রধানদের রেডিও স্টেশনে নিয়ে এসে আনুগত্য প্রকাশ করার ব্যবস্হা করেন খুনিরা। হাসানুল হক ইনু সাথেই ছিলেন।
————————————————————————
৩. ১৫ আগস্ট দুপুরে হত্যাকারীদের সাথে বঙ্গভবনে কর্ণেল তাহের বৈঠক করেন। শেখ মুজিবের লাশ সমাধিস্হ না করার সিদ্ধান্তে- খুনি মেজরদের সাথে কর্ণেল তাহের একমত ছিলেন। কর্ণেল তাহের এর প্রস্তাব ছিলো – শেখ মুজিবের লাশটি, বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া। মুজিবকে কবর দেয়ায় জাসদ কর্মী নঈম জাহাঙ্গীর এর নিকট বিরক্তিও প্রকাশ করেছিলেন,কর্ণেল তাহের।
————————————————————————-
৪.জাসদের পক্ষ হতে একটি লিফলেটও ছাপা হয়, শিরোনাম ছিলো -“ খুনি মুজিব খুন হয়েছে- অত্যাচারীর পতন অনিবার্য “।
————————————————————————–
হাসানুল হক ইনু ও জাসদের প্রতিবাদ এর নমুনা।
**********************************************
দুই
———————————————————————
১৯৭৪ সালের ২৭-২৮ জুন জাসদ নেতৃত্ব গণবাহিনী গঠন করে।গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার এর দ্বায়িত্ব নেন কর্ণেল তাহের আর ডেপুটি কমান্ডার -হাসানুল হক ইনু।১৫ আগস্টের পর জাসদের পক্ষ হতে কয়েকবার খুনি মেজর রশিদ এবং ফারুক এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন-গনবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার কর্ণেল তাহের।
————————————————————————
সেনাবাহিনীতে চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে- ৩ রা নভেম্বর ১৯৭৫, খালেদ মোশাররফ অভ্যুথান করলে-কর্ণেল তাহের জেনারেল জিয়া এবং
খুনি মেজরদের পক্ষালম্বন করেন, যে কোন মুল্যে-জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
————————————————————————-
যে জিয়া বাংলায় লিখতে এবং পড়তে জানতেন না,জীবনের শেষাংশে রাস্ট্রপতি হয়ে-কোনরকম জিয়া শব্দটি লিখে স্বাক্ষর করতেন,তাকে মুক্ত করতে না পারলে-
বাংলাদেশে কথিত বিপ্লব হবে না। এমন ধারনা পোষন করতেন – কর্ণেল তাহের।
————————————————————————–
শুধু কি তাই-০৪ নভেম্বর ‘৭৫ খুনি মেজররা দেশ ছাড়ার সময় -” কর্ণেল তাহের এবং গণবাহিনীর সঙে উপযুক্ত সময়ে আরেকটি বিপ্লব ঘটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন”।
***********************************************
০৬ নভেম্বর ‘৭৫ কলাবাগানের একটি বাসায় -জাসদের ইমার্জেন্সি স্টান্ডিং কমিটির বৈঠক বসে।বৈঠকে – একজন সদস্য আখলাকুর রহমান প্রশ্ন করেছিলেন- জিয়াকে কি বিশ্বাস করা যায়?কর্ণেল তাহের উত্তর দিলেন-” আপনারা যদি আমাকে বিশ্বাস করেন-তাহলে জিয়াকেও বিশ্বাস করতে পারেন”।
————————————————————————–
ফিল্ড কমান্ডার কর্নেল তাহের বিপ্লব করতে বেরিয়ে গেলেন- সাথে নিলেন ডেপুটি – হাসানুল হক ইনুকে।রাত একটায় নাকি বিপ্লব শুরু হওয়ার কথা,কিন্তু বিপ্লব দেরি করতে রাজি না।এক ঘন্টা আগেই সুবেদার মাহবুব গুলি ছুড়ে দিলেন।সামনে অফিসার দেখলেই হত্যা করা শুরু করলেন।জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হলো।
” বিপ্লবী ফিল্ড কমান্ডার কর্নেল তাহের আর তার ডেপুটি হাসানুল হক ইনু, এমন এক বিপ্লব করলেন -তাদের অধস্তন গনবাহিনীর কেউ তা জানলো না।
————————————————————————–
জাসদের স্রস্টা- সিরাজুল আলম খানকে-বিপ্লবের আশে পাশেও খুঁজে পাওয়া গেলো না। আখলাকুর রহমান চলে গেলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কল্লা শাহ্’ র মাজারে।
————————————————————————–
বিভ্রান্ত জাসদ তরুণদের কন্ঠে -অনেক শ্লোগান এর পাশাপাশি আরেকটি শ্লোগান,বারবার ধ্বণিত হতে লাগলো -বাংলাদেশ বিরোধী সেই শ্লোগান –
” রুশ ভারতের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান।”
************************************************
তিন
———————————————————————-
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারত এবং সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার অবদান-অনস্বীকার্য। রুশ- ভারতকে একত্রিত করে,তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া,প্রকারান্তরে- মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার ইঙ্গিত বহন করে। শ্লোগানটি মুসলিম লীগ ও জামায়াতের।
————————————————————————–
এরই মধ্যে, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, গোপনে খুনি মেজরদের দিয়ে আরেকটি হত্যাকান্ড-সংঘটিত করে ফেলে।০৩রা নভেম্বর ভোররাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় -তাজউদ্দীন আহমদ সহ জাতীয় চার নেতাকে।
************************************************
০৫ নভেম্বর – হাইকোর্টে রিট করার কথা ছিলো -জাতীয় নেতাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে।তাজউদ্দীন আহমদ জেলে বসেই নানারকম চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সহকর্মী এক বন্দীকে বলেছিলেন-“আশাকরি ডিসেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি হয়তো পাল্টে যেতে পারে “।কিন্তু,বিচক্ষণ তাজউদ্দীন’৭১ এর মতন দৃঢ় ছিলেন না।
গৃহবন্দি হতে পুরো বন্দী হয়ে যাওয়ার সময়, ২২ আগস্ট ১৯৭৫ এ স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীনকে বলেছিলেন-” Take it forever. ধরে নাও- চিরদিনের জন্য যাচ্ছি”।
————————————————————————–
০৪ নভেম্বর ‘৭৫- এ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এর নেতৃত্বে-ঢাকা শহরে সকল শ্রেণী- পেশার নাগরিকদের সংগঠিত করে -শেখ মুজিব ও তার নিহত পরিবারের সদস্যদের স্মরণে-একটি শোক মিছিল বের করা হয়।মিছিলটি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে শেষ হয় এবং মিছিলে অংশগ্রহনকারি অনেকে-৩২ নম্বর রোড এর মুখে শেখ মুজিবের স্মরণে-ফুল ছুড়ে মারে।
————————————————————————
“আমরা সবাই মুজিব সেনা ভয় করি না বুলেট বোমা”
শেখ মুজিবের লাশটি ৩২ নম্বরে -৩২ ঘন্টা পড়েছিলো।
ভাদ্র মাসের গরমে লাশটি পঁচে -যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।
একজন মেজর যিনি খুনিদের একজন শেখ মুজিবকে-সামনাসামনি কোনদিন দেখেননি-তিনি – বুট দিয়ে মুজিবের – মরা মুখটি কাঁত করে তার -মুজিব দেখার বাসনা মিটিয়েছিলেন।কোথায় ছিলো মুজিব সেনা-কোথায় ছিলো বুলেট- বোমা-শেখ মুজিবের বিশেষ খনির -কোন বিশেষায়িতকে সেদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
————————————————————————-
০৭ নভেম্বর ‘ ৭৫,রাত আড়াইটার সময় কর্নেল তাহের,ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, এ -মুক্ত জিয়াকে তার সাথে রেডিও স্টেশনে আসতে বলেন। ধুর্ত জেনারেল জিয়া কর্ণেল তাহের এর সাথে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসতে অস্বীকৃতি জানান।জেনারেল জিয়া, জাসদের স্রস্টা -সিরাজুল আলম খান এর অবস্থান জানতে চান।
গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার বলতে পারলেন না -তাদের বিপ্লবের নেতা কোথায়?
————————————————————————-
রেডিও স্টেশনের দখল নিয়ে -কর্ণেল তাহের এর আরেক ছোট ভাই -ড. আনোয়ার হোসেন – জিয়ার পক্ষে ঘোষণা দিচ্ছিলেন একবারের জন্যও জাসদ কিংবা
সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হলো না।ঘোষিত হচ্ছিল – জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করার কথা।
————————————————————————–
ডেপুটি কমান্ডার হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে -গণবাহিনী কমান্ডার -জেনারেল জিয়াকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হতে বের করতে পারলেন না। জেনারেল জিয়া – অফিসার পরিবেস্টিত হয়ে -ক্যান্টনমেন্ট এ বসেই- তার ভাষণ রেকর্ড করলেন।অফিসারদের সাথে বাদানুবাদ জড়ালেন -কর্ণেল তাহের, একপর্যায়ে – জেনারেল জিয়ার অনুসারী -লে. কর্ণেল আমিনুল ইসলাম,জাসদকে ভারতের বি টিম বলে আখ্যা দিলেন।নিরবে ক্রাচে ভর করে বেরিয়ে আসলেন-বিপ্লবের ফিল্ড কমান্ডার ও তার ডেপুটি।
————————————————————————–
জাসদ ছাত্রলীগ- বিভিন্ন থানার দ্বায়িত্ব নেয়ার চেষ্টা করছিলো।কোন কোন ছাত্রনেতা ওসিদের চর-থাপ্পড় দিচ্ছিলেন।বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়-
ওসিদের চর দিতে হবে কেন?কারণ বের করা গেলো না।হয় বন্দী করতে হবে, না হয় সমর্থক হলে সাথে থাকবে।
————————————————————————–
চড়- থাপ্পড়ের বিপ্লব বেশিক্ষণ চালানো গেলো না।
————————————————————————-
পরিকল্পনা ছিলো – ০৭ নভেম্বর ‘মুক্ত জিয়া” কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে বক্তৃতা দিবেন। জাসদ এর নেতারা বড় জমায়েত করবেন। জিয়া আসেনি,
জাসদ নেতারা- জমায়েতও করেনি,নিজেরাও আসেনি। জাসদ স্রস্টা- সিরাজুল আলম খান, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে-কোথায় হারিয়ে গেছে – কেউ জানেন না।
————————————————————————–
সকাল ৯টায় জাসদ ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসিব খান,মাইক নিয়ে শহীদ মিনারে গেলেন।
শ্লোগান দিলেন-জিয়া- জলিল জিন্দাবাদ, জিয়া – তাহের জিন্দাবাদ।
কেউ সাড়া দিলো না -এই ডাকে।সকাল ১০ টার দিকে-ট্রাকে ট্রাকে সৈনিক এবং কিছু বেসামরিক লোক,ঢাকার রাজপথে -জিয়া-খন্দকার মোশতাক এর ছবি নিয়ে
শ্লোগান দিয়ে দিলেন–“নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, জিয়া – মোশতাক জিন্দাবাদ। “
————————————————————————–
বাংলাদেশ এর মুখটি-পিছনে ঘুরতে শুরু করলো,পুনর্বার এবং স্হায়ীভাবে।
কাজটি করে দিলেন – জাসদ, কর্ণেল তাহের এবং হাসানুল হক ইনু।
————————————————————————–
চতুর্থ পর্ব
————————————————————————
০৭ নভেম্বর ‘৭৫ সন্ধ্যায় চলে ক্ষমতার পালাবদল।রেডিও স্টেশনে খন্দকার মোশতাক স্বেচ্ছায় -ক্ষমতা হতে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
তার পুর্বে প্রধান বিচারপতি সায়েম ঘোষণা করেন-রাস্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক এর অনুরোধে,তিনি রাস্ট্রপতির দ্বায়িত্ব গ্রহন করেছেন।
কর্ণেল তাহের সেখানে ছিলেন। সবশেষে তাহের, জিয়াকে পাশের রুমে -বিদ্রোহী সিপাহিদের একটি দলের কিছু কথা শোনার জন্য অনুরোধ করেন। জেনারেল জিয়া পাশের রুমে যান।সেপাইরা ১২ দফা দাবির কাগজ দিলে, তা পড়ে-তাতে সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করে দেন- জিয়া।আহামরি কিছুই ছিলো না – সেই দাবিতে।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রতো দুরের কথা -মুক্তিযুদ্ধের মুল চারনীতির উল্লেখও নেই।
————————————————————————–
০৮ নভেম্বর ‘৭৫ রাস্ট্রপতি সায়েম সামরিক শাসন জারি করে-নিজেই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন।জেনারেল জিয়াসহ অন্য দুইবাহিনীর প্রধান হন-
উপ- সামরিক আইন প্রশাসক।
————————————————————————–
জলিল – রবকে জেল হতে ছেড়ে দেন জিয়া।০৮ নভেম্বর তারা মুক্তি পান।
এদিন- জাসদ, একটি সমাবেশ করার চেস্টা করে বায়তুল মোকাররম চত্বরে। সেনাবাহিনী ভেঙে দেয় সেই সভা।
————————————————————————–
নুতন করে আবার বিপ্লব করবেন-ফিল্ড কমান্ডার।খুনি মেজরদের সাথে তার পুর্বেই কথা হয়ে আছে। যা উল্লেখিত। সুবেদার মাহবুব সায় দিলেন না।
সৈনিকরা সাড়া দেননি।তারপরও চেস্টা চলে। সম্ভাব্য তারিখ – ২৪ নভেম্বর ‘ ৭৫।২৩ নভেম্বর গ্রেফতার হয়ে যান – জাসদ নেতারা।
২৪ নভেম্বর গ্রেফতার হন- কর্ণেল তাহের।
————————————————————————–
নভেম্বর এর শুরুতেই -সাংবাদিক আতিকুল আলম-যিনি ঢাকাস্থ বিবিসির ও রয়টার্স এর সংবাদদাতা-ছিলেন চরম প্রতিক্রিয়াশীল,
তিনি-ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে উদ্দেশ্য করে লেখা -তাজউদ্দীন আহমদ এর একটি কথিত চিঠি নিয়ে,
রাস্ট্রদুত পাড়াসহ সমাজের এলিট শ্রেণীর মধ্যে -প্রচারণা শুরু করেন।
————————————————————————–
এ ধরনের একটি পত্রের কথা আতিকুল আলম জানালেও- এর কোন সত্যতা বা বিষয়বস্তুর প্রমান আজ অবধি মেলেনি।
————————————————————————–
এসময়ে -তাজউদ্দীন আহমদ এর মাধ্যমে -বাংলাদেশটা মণি সিংহ-মোজাফ্ফরের হাতে চলে যাবে- এমন প্রচারনা ও শংকা-
জাসদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্র-৩রা নভেম্বর থেকেই করতে থাকে।
************************************************
ক.
তাজউদ্দীন আহমেদ, রাজনীতিতে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল চিন্তার ধারক কামরুদ্দিন আহমদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
কামরুদ্দিন আহমদ এর ছোট ছেলে -নিজামুদ্দিন আহমেদ আজাদ-ঢাকা নগর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন-এবং
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নভেম্বর -বেতিয়ারায় সম্মুখ সমরে শহীদ হন।
খ.
তাজউদ্দীন আহমদ এর স্ত্রী -বেগম জোহরা তাজউদ্দীন-সিপিবি প্রভাবিত নারী সংগঠন,মহিলা পরিষদের নেত্রী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী ভিন্নদলের সাথে যুক্ত থাকবেন-এটা হয় না -অনেকটা ব্যাক্তি নির্দেশেই-
জোহরা তাজউদ্দীনকে-১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে বাধ্য করে।
গ.
তাজউদ্দীন আহমদ গনতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বাস করতেন। আফ্রো- এশীয় গণসংহতি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
সাম্রাজ্যেবাদ- বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতিক ছিলেন।
ঘ.
বাংলাদেশ বিরোধী দক্ষিণপন্হী অংশ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর লুটপাটকারী-উভয় পক্ষের নিকট তাজউদ্দীন আহমদ – একটি ভীতির নাম।
***********************************************
২৬ নভেম্বর ‘৭৫।জাসদ গণবাহিনীর ৬ সদস্যদের একটি সশস্ত্র দল-ধানমন্ডিস্হ ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা করে-এবং হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার চেস্টা করে।
————————————————————————-
সমর সেনকে জিম্মি করে-তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে -দোতলায় নিয়ে যাওয়ার সময় -সমর সেন তরিৎ ছুটে যায়, এবং সশস্ত্র ভারতীয় নিরাপত্তা প্রহরীদের গুলিতে ঘটনাস্হলে নিহত হন গনবাহিনীর চার সদস্য -বাহার,বাচ্চু,মাসুদ, ও হারুন। আহত হন- বেলাল ও সবুজ।সমর সেন এর কাঁধে গুলি লাগে।
————————————————————————–
পুরো পরিকল্পনাটি করেছিলেন -আনোয়ার হোসেন,কর্নেল তাহের এর ছোট ভাই।আরেক ছোট ভাই -ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল আহত হন।আরেক ছোট ভাই,
সাখাওয়াত হোসেন বাহার-ঘটনাস্থলেই মারা যান।
***********************************************
জাসদ নেতারা কিছুই জানতেন না।কেন হামলা – তাও বুঝতে পারলেন না। সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে- তাও অজানা আজ অবধি।
————————————————————————–
এখন-—আনোয়ার হোসেন, ড. আনোয়ার হোসেন -আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের নেতা।
বেলাল -ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সংসদ সদস্য।
————————————————————————–
আর কিছু?
আরোও আছে।
————————————————————————–
পঞ্চম পর্ব
————————————————————————-
দিকবিদিক শুন্য হয়ে যায় – জাসদ কর্মীরা। নেতাদের বড় অংশ জেলে বন্দী। সরকারের দমন- পীড়ন নির্যাতন বেড়ে যায় – বহুগুন। গ্রেফতার হতে থাকে- জেলা থানা পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।জাসদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক- সিরাজুল আলম খান।যিনিই মুলত – জাসদের স্রস্টা। তাঁকেও খুজে পাওয়া যায় না। ক্ষয় হতে থাকে- জাসদ।
————————————————————————–
জেনারেল জিয়া – ক্ষমতার সর্বোচ্চ বিন্দুতে -নিজেকে স্হায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে-অগ্রসর হতে থাকেন। মুসলিম লীগ,জামায়াত – পিকিংপন্থী বামদলগুলো-
যাদের অনেকেই বাংলাদেশ এর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন না – তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন- জিয়া।
————————————————————————-
অথচ- ১৯৭৬ এর মার্চ মাসের ৩১ তারিখে-“মার্চ মিছিল ” নামে একটি মিছিলের কর্মসূচি দেয়- জাসদ।সিরাজুল আলম খান তখনো গ্রেফতার হননি।
দাবিগুলোর দিকে যদি তাকাই-তাহলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়।
প্রধান এবং এক নম্বর দাবি-ভারত- রাশিয়া – আমেরিকার প্রভাবমুক্ত শাসনব্যবস্হা
দ্বিতীয় দাবি – ফারাক্কা বাঁধ এর সমাধান
তৃতীয় দাবি- চীন এর সাথে স্হায়ী সম্পর্ক স্হাপন,
চতুর্থ দাবি – নির্বাচন এর তারিখ,
পঞ্চম দাবি- রাজবন্দিদের মুক্তি
তারপর আরোও কিছু দাবি সংযুক্ত করা হয়।
————————————————————————–
১৯৭১ সালের ০৫ ডিসেম্বর পরাশক্তি হিসেবে চীন-প্রথম ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে জাতিসংঘে-বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্টের হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর- চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
————————————————————————–
মার্চ মিছিলের কর্মসূচিতে ৬ শত জাসদ কর্মী -গ্রেফতার হয়ে যায়। যে দলের বড় অংশ এর নেতারা কারাবন্দী তাদের মুক্তির দাবি থাকে পঞ্চম নম্বরে, চীনের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপনের দাবি থাকে প্রথমে, এই দাবিনামা রচিত হয় কেমন করে ?
————————————————————————–
দলটিতে সংঘটিত হওয়া তরুণদের বিপ থগামী করে তোলাই কি কোন শক্তির ইচ্ছা ছিলো? আর সেই ইচ্ছা পুরুণের জন্য – নেতৃত্ব এর কোন একটি
অংশ কি কাজ করেছিলো – সুচতুরভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো ঘুরছে-বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
————————————————————————–
সিরাজুল আলম খানকে আওয়ামী লীগের সরকার কখনোই স্পর্শ করেনি। চুয়াত্তরের ডিসেম্বর মাসে জনৈক সাইদুর রহমানকে দিয়ে শেখ মুজিব – সিরাজুল আলম খানকে-বাসায় ডেকে নিয়ে আসে। একে অপরকে জড়িয়ে কান্না – কাটিও করে। একপর্যায়ে শেখ মুজিব তার স্নেহের সিরাজকে বলেন-
“তুই যা চেয়েছিলি, তা-ই করে দিলাম , জলিল রবকে তুই আমার দলে দে। ”
————————————————————————
আ স ম আব্দুর রবকে ঢাকা জেলে এ বার্তা পাঠিয়েছিলেন- সিরাজুল আলম খান। বন্দী জাসদ নেতারা- মুজিবের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন- তাদের প্রিয় দাদাভাইকে।
————————————————————————–
সিরাজুল আলম খান -শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ জনের একজন। সে-ই সাক্ষাৎ এ-শেখ মুজিবের নিরাপত্তা নিয়ে কথা তোলেন- সিরাজ। আবেগপ্রবণ মুজিব- স্নেহের সিরাজকে বলেন-” আমাকে নিয়ে ভাবার দরকার নেই- তোকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হয়। তুই পারলে অন্য কোথাও চলে যা।”
শেখ মণির বিরোধিতায় মুজিব আর সিরাজ এর পরবর্তী সভাটি আর হয়নি। সিরাজ ঠিকই কোথাও চলে গিয়েছিলেন।
***********************************************
১৫ ই আগস্ট সকালে কলকাতার ভবানীপুর রাজেন্দ্র প্রসাদ রোড এর চিত্তরঞ্জন সুতার এর বাড়িতে নিরাপদে ঘুমিয়েছিলেন- সিরাজ। সুতারের স্ত্রী মন্জুশ্রী দেবী সকাল দশটায় ঘুম থেকে তুলে শেখ মুজিবের হত্যার খবর দেন-সিরাজকে। হাউ মাউ করে নেতার জন্যে কেঁদে ওঠেন- সিরাজ।
————————————————————————– অথচ-
তার কথায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র এর শ্লোগান তুলে – হাজার হাজার তরুণ আত্মাহুতি দিয়েছেন, ৭২- ৭৫’ র পর্যন্ত।
আবার ১৯৭৬ এ জাসদ নেতারা যখন জেলে,তখন, মার্চ মিছিলের পুর্বে-রায়হান ফেরদৌস নাম এক সহকর্মী যখন সিরাজকে প্রশ্ন করেছিলেন-
কর্ণেল তাহের এর সম্ভাব্য বিচার নিয়ে। কোনঠাসা জাসদকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সাথে আলোচনায় যাওয়া যায় কিনা-
এ প্রস্তাব যখন তুলেছিলেন- প্রিয় দাদা ভাই এর কাছে,তখন, “তাহের এর কিছু হলে-গণঅভ্যুত্থান হয়ে যাবে- এই দেশে।”
জ্বালাময়ী উত্তর ছিলো-সিরাজুল আলম খান,এর।
————————————————————————–
২১ জুন ১৯৭৫, একটি সামরিক আদালত গঠিত হলো। কেন্দ্রীয় কারাগারেই বসলো সেই আদালত। পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসার –
কর্ণেল ডি এস ইউসুফ সেই আদালতের চেয়ারম্যান। খুবই সংক্ষিপ্ত সেই বিচার। বিচার শুরুর দ্বিতীয় দিনেই সার্জেন্ট রফিক নামের
এক অভিযুক্ত আসামি জুতা ছুড়ে মারলেন-আদালতের চেয়ারম্যান এর উপর।
————————————————————————–
১৭ জুলাই ১৯৭৬, কর্ণেল তাহের এর ফাঁসির রায় হলো। ২১ জুলাই ভোররাতে কার্যকর।
বিচারে- আদালতের উদ্দেশ্যে জুতা ছুড়ে মারা, সার্জেন্ট রফিক বেকসুর খালাস।
বিভিন্ন মেয়াদে অনেকের জেল জরিমানা।
————————————————————————–
কর্ণেল তাহের এর ফাঁসিতে- গণঅভ্যুত্থান হয়নি।
ঢাকার রাজপথে একটি মিছিল পর্যন্ত কেউ করেনি।
১০দিন পর, ৩১ জুলাই ১৯৭৬ তারিখে- একটি হরতাল ডেকে দিয়েছিলো- জাসদ।
হরতালটি পালিত হয়নি,বাংলাদেশের কোথাও।
————————————————————————–
ক্রাচে ভর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পা হারানো সেক্টর কমান্ডার যখন, ফাঁসির মঞ্চে- উঠছেন,
জাসদ স্রস্টা- সিরাজুল আলম খান কিন্তু, তখনও জেলের বাইরে।
————————————————————————–
ষষ্ঠ পর্ব
————————————————————————–
কর্ণেল তাহের এর চিন্তার মাঝে হঠকারিতা ছিলো। প্রথম এবং শেষ দর্শনে – ন্যাপ নেতা , অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ -সরাসরি এ মন্তব্য করেছিলেন- কর্ণেল তাহেরকে। তাহের সহধর্মিণী লুৎফা -মতিয়া গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলেন। ইডেন কলেজে যখন পড়তেন-ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন – লুৎফা। পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এর প্যানেলে।
************************************************
১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে-বিয়ের পর, লুৎফা যখন তাহেরকে নিয়ে ঢাকা আসছিলেন- তখন -প্রিয় মতিয়া আপার সাথে ট্রেন এ দেখা হয়- লুৎফা’ র।
মতিয়া চৌধুরী – অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর সাথে – কোন এক সভা শেষে,ঐ একই ট্রেনে ঢাকা আসছিলেন। লুৎফা’কে তার প্রিয় নেত্রী মতিয়া চৌধুরী-
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন- স্বামী তাহেরসহ। দীর্ঘ ট্রেন যাত্রার পথে- রাজনৈতিক আলোচনায় – সমাজতন্ত্র ও বিপ্লব সম্পর্কে –
তাহের এর আলোচনা শুনে- তাহেরকে হঠকারী চিন্তা হতে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন- ন্যাপ (মোজাফফর) এর সভাপতি -অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
————————————————————————–
২৫ জুলাই ১৯৭১-শিয়াল কোট সীমান্ত দিয়ে -মেজর মন্জুর ও তার পরিবার, মেজর জিয়াউদ্দিন, ক্যাপ্টেন পাটোয়ারীকে নিয়ে পাকিস্তান হতে পালিয়ে এসে –
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন-কর্ণেল তাহের। মহান মুক্তিযুদ্ধে পা হারিয়ে ছিলেন।
***************************-********************
পঙ্গু এই সহযোদ্ধাকে, জীবন বাঁচানোর পুরস্কারস্বরূপ- ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দিলেন জেনারেল জিয়া। ২১ জুলাই, ভোররাতে- শেষ চেস্টা হিসেবে লুৎফা
ফোন করেছিলেন- জেনারেল মন্জুরকে। জেনারেল মন্জুর এর উত্তর ছিলো -” তাহের বেঁচে থাকলে- চেস্টা করে দেখবো।”
————————————————————————-
যে আইন এ- কর্ণেল তাহের এর ফাঁসি হয়েছিলো-এই রকম আইনই তখন বাংলাদেশে ছিলো না। তাহের এর ফাঁসির ১০ দিন পর-৩১ জুলাই, ১৯৭৬.
রাস্ট্রপতি বিচারপতি এ এম সায়েম এই ধরনের একটি আইন- তৈরি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
————————————————————————–
দেশের প্রধান বিচারপতি, দেশের রাস্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক – যে আইন দেশেই নেই – সে-ই আইনে-একজন মানুষকে ফাঁসি দেয়ার ঘটনাটিতে সহায়তা করলেন। তাহের এর পক্ষে -তাঁর স্ত্রী, লুৎফা তাহের- বিচারপতি সায়েম এর নিকট প্রানভিক্ষা চাইলেন। বিচারপতি সায়েম তা প্রত্যাখান করলেন।
————————————————————————-
ঐ সামরিক আদালতে- আরো দু’জনের ফাঁসি হয়। মেজর জলিল ও তাহের এর বড় ভাই – ইউসুফ এর। তারপরদিন -১৮ জুলাই তারিখে – সেই রায় সংশোধিত হয়,
ইউসুফ ও জলিলের সাজা কমিয়ে- যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়।
————————————————————————-
সামরিক আদালত মেজর জিয়াউদ্দিনকে -১২ বছর,
আ স ম আব্দুর রব, আনোয়ার হোসেন , হাসানুল হক ইনু – প্রত্যেকেকে-১০ বছর,
জাসদ স্রস্টা -সিরাজুল আলম খান, করপোরাল আলতাফ হোসেন, করপোরাল শামসুল হক- প্রত্যেকেকে- ৭ বছর
নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ জালালউদ্দিন, হাবিলদার এম এ বারেক, রবিউল আলম,সালেহা বেগম, নায়েক সিদ্দিকুর রহমান – প্রত্যেকেকে- ৫ বছর,
হাবিলদার আব্দুল হাই,করপোরাল আব্দুল মজিদ, প্রত্যেকেকে-১ বছর করে- সাজা দেয়।
————————————————————————-
বিচার শুরুর দুই/ তিনের মধ্যে- বেকসুর খালাস পাওয়া একজন – আখলাকুর রহমান, আরেক বেকসুর খালাস পাওয়া আসামী-সার্জেন্ট রফিককে জানিয়ে দিলেন-
এই মামলায় কর্ণেল তাহের এর ” ক্যাপিটেল পানিশমেন্ট ” হয়ে যাবে। তার পীরবাবা – ফকির সুলতানউদ্দিন, জেলগেটে তাকে এই তথ্য দিয়ে গেছেন।
ড. আখলাকুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার একবছর পরে – ১৯৭৩ সালে ফিরে এসে – জাসদের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন।
দন্ডিত আসামিদের সকলেই – কারাগারে। যে দুই/ তিনজন তখনো পলাতক কিংবা নিরাপদ ‘এ তাদের মধ্যে অন্যতম-
জাসদ স্রস্টা – সিরাজুল আলম খান।
————————————————————————–
আরেকটি চরিত্র – বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়ে-নিরাপদ দুরুত্বে- সেনাবাহিনীর উপ- প্রধান হিসেবে খন্দকার মোশতাক এর হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত-
পাকিস্তান ফেরত সেই সামরিক কর্মকর্তার নাম- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
————————————————————————–
সপ্তম পর্ব
————————————————————————–
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে-প্রায় পাঁচশত অফিসার এবং বিশ হাজার সৈনিক পাকিস্তান হতে দেশে ফিরে আসে।
এদের মধ্যে ২৪ মার্চ ১৯৭১ এ বন্দী ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার ব্যতিত সকলেই, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলেন,
চাকুরি করেছেন পাকিস্তান বাহিনীর অধীনে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সুযোগ থাকা সত্বেও, মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, তাদের একজন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ছুটিতে এসে-রংপুরে ছুটি কাটিয়ে -পাকিস্তানে ফেরত গিয়েছিলেন-এরশাদ।
————————————————————————–
১৯৭৩ সালেই মুজিব সরকার এরশাদকে কর্ণেল হিসেবে প্রমোশন দেয়। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে – মেজর ডালিমের স্ত্রীকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে
ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে অপমানিত করলে- সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ এবং উপ- প্রধান জিয়া, বিষয়টি – শেখ মুজিবের নিকট উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু – চতুর এরশাদ- অফিসারদের ভেতর বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির চেস্টা করলে- জেনারেল জিয়া – ” তাকে প্রকাশ্যেই ধমক দেন”। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন।
***********************************************
জেনারেল জিয়া ২০ আগস্ট ১৯৭৫ এ যখন- সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান- একই সময়ে এরশাদকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে, সেনা উপ- প্রধান করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এরশাদ- তখন দিল্লিতে – সামরিক প্রশিক্ষণে। কার পরামর্শে এ নিয়োগ দিয়েছিলেন – খন্দকার মোশতাক ? এরশাদের নিয়োগ সম্পর্কে,
জেনারেল জিয়া -কিছুই জানতেন না।
————————————————————————–
নিয়োগ প্রাপ্তির পর, ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে এরশাদ, সামরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ঢাকায় আসেন- সেনাসদরের অনুমতি ব্যাতিরেকে।
ক্ষুব্ধ হন জেনারেল জিয়া। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে- এরশাদ সেনাসদরে জিয়ার সাথে দেখা করতে যান- নিজ উদ্যোগেই। এরশাদ কেন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সেনাসদরের অনুমতি ছাড়া দেশে এসেছেন- কৈফিয়ত চান, অত্যন্ত রূঢ়ভাবে-সেনা প্রধান জেনারেল জিয়া। “তার স্ত্রীর জন্য একজন কাজের লোক জোগাড় করতে তার দেশে ফেরা “- এই ছিলো, এরশাদের উত্তর।
————————————————————————–
তাৎক্ষণাৎ এরশাদকে দেশত্যাগের নির্দেশ দেন- জেনারেল জিয়া। জিয়াকে না জানিয়ে -এরশাদ চলে যান-বঙ্গভবনে। সারারাত খুনি মেজরদের সাথে আলোচনা করে – পরেরদিনই চলে যান -দিল্লিতে। কেন এরশাদকে- সেনা উপপ্রধান করা হয়েছিলো? কেন এসেছিলেন – এরশাদ? কি আলোচনা করে ছিলেন – ফারুক / রশিদসহ খুনি চক্রের সাথে? সবই অজানা।
————————————————————————–
বহুবছর পর জাসদ স্রস্টা-সিরাজুল আলম খান এর সাথে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঐক্য – আমরা দেখতে পাবো।
————————————————————————–
পর্যুদস্ত জাসদ। সবাই জেলে। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে – শুধু জাসদ স্রস্টা – সিরাজুল আলম খান এবং করপোরাল আলতাফ, তখনো বাইরে।
চমকে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটালেন- সিরাজুল আলম খান, ১৯৭৬ এর ৩১ অক্টোবর।
————————————————————————–
জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির বর্ধিত সভা হলো ঢাকায়। ২৬ হতে ৩১ অক্টোবর ১৯৭৬ পর্যন্ত চললো – সেই সভা। সভাশেষে-পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের পুর্বে-
জাসদ এর সব কমিটি – কেন্দ্রীয় – জেলা- থানা – গণবাহিনী’র কমিটি- সব কমিটি বাতিল করে দেয়া হলো। যোগাযোগ এর জন্য – প্রত্যেক গণসংগঠনের ২ জন নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হলো। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে – জাতীয় সম্মেলন করে- তারপর দলের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- এমন চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হলো- সারাদেশে।
————————————————————————–
দলটির স্রস্টা – সিরাজুল আলম খান, দলটির হাজার হাজার তরুণকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে, বিপদের মধ্যে ফেলে, অবশেষে এক অর্থে- দলটি বিলুপ্তই করে দিলেন।
————————————————————————–
পরবর্তী তিন মাসতো দুরের কথা – দলটি আর ঐক্যবদ্ধভাবে- কোন জাতীয় সম্মেলন’ ই অনুষ্ঠিত করতে পারে নাই।
————————————————————————–
অস্টম পর্ব
————————————————————————–
দন্ডপ্রাপ্ত জাসদ নেতাদের সবাই একে একে গ্রেফতার হতে থাকে। বাইরে ছিলো দুই জন। জাসদ স্রস্টা- সিরাজুল আলম খান এবং করপোরাল আলতাফ।
জাসদ এর মধ্যে জেনারেল জিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখতো – একটি অংশ। তাদের একজন – এম এ আউয়াল।
————————————————————————–
কর্ণেল তাহের এর বিচার চলাকালে- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এম এ আউয়াল জেনারেল জিয়ার পক্ষ হতে একটি সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন ।
কিন্তু, ততদিনে মোহ ভঙ্গ ঘটেছে- জাসদ নেতৃত্বের। কর্নেল তাহের এর মন্তব্য ছিলো – ” জিয়াকে আর বিশ্বাস করা যায় না। ‘
————————————————————————–
জাসদ এর ভেতরে- জেনারেল জিয়ার সহযোগী ছিলো। জাসদ স্রস্টা – সিরাজুল আলম খানকে গ্রেফতার করার কাজে জাসদের ভেতর হতেই কেউ কেউ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তা করছিলেন- এমন অভিযোগ, জাসদের ভেতরই উথাপিত হতে থাকে। এই রকম একটি ঘটনা জাসদ গণবাহিনী জেনে যায়।
সিরাজুল আলম খান এর অবস্থান – সরকার এর গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়ে দেয়ার অভিযোগে- জাসদ ঢাকা নগরের কোষাধ্যক্ষ – জয়নাল আবেদীন এর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে – জাসদ গণবাহিনী। গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন- সিরাজুল আলম খান। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে- ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছে, রিকশার উপর- ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়- জয়নাল আবেদীনকে।
————————————————————————-
সিরাজুল আলম খান আর করপোরাল আলতাফ, আত্নগোপনে থেকে – বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত – ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর –
ঢাকার মোহাম্মদপুর এর হুমায়ুন রোড এর একটি বাসা হতে গ্রেফতার হয়ে যান – সিরাজুল আলম খান।
একমাত্র করপোরাল আলতাফকে কখনো গ্রেফতার করতে পারেনি জিয়া সরকার। ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় পুলিশের সাথে সম্মুখযুদ্ধে- প্রাণ হারান- করপোরাল আলতাফ।
বরগুনার একটি দরিদ্র ঘরের সন্তান – আলতাফ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। খুবই দরিদ্র সেই পরিবারটি।
স্ত্রী, দুই অবুঝ শিশু সন্তান, দরিদ্র বৃদ্ধা মাকে-রেখে তথাকথিত বিপ্লবের আগুনে ছারখার হলেন- করপোরাল আলতাফ।
————————————————————————–
জেনারেল জিয়া সব বাধা দুর করে – নিজ ক্ষমতা সংহত করতে অগ্রসর হতে থাকেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ নভেম্বর – রাস্ট্রপতি এ এস এম সায়েমকে সরিয়ে, –
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এর পদটি- শান্তিপুর্ণভাবে দখল করে নেন- জেনারেল জিয়া।
রাস্ট্র এর নির্বাহী ক্ষমতা চলে যায় জিয়ার হাতে। জেনারেল জিয়ার ভৃত্য এর মতন- বঙ্গভবনে-রাস্ট্রপতির পদে থেকে – আরাম আয়েশেই জীবন যাপন করছিলেন-
বিচারপতি এ এস এম সায়েম। জেনারেল জিয়া তাও কেড়ে নেন- বিচারপতির সায়েম এর নিকট হতে।
চাকুরী হারানোর মতন- ক্ষমতাহীন ” রাস্ট্রপতি” র পদটি হারিয়ে- ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাতে- বঙ্গভবনে বসবাসের আশা ভরসা জলাঞ্জলি দিয়ে –
বাড়ি ফিরে যান- বিচারপতি সায়েম।
————————————————————————-
২২ এপ্রিল ১৯৭৭. মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান. মহামান্য রাস্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সেনাবাহিনীর প্রধান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
সব ক্ষমতা জিয়ার হাতে। পিছনে আছে- পিকিংপন্থী বাম- জামাত ইসলামী, – নেজামে ইসলামী-মুসলিম লীগ, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে রুশ- ভারতের ষড়যন্ত্র মনে করতেন, সেই কথা বলছিলেন-১৯৭১ এ- তাদের সকলের সেই মুহূর্তে জেনারেল জিয়ার কাছে দাবি- মণি সিংহ এর কমিউনিস্ট পার্টি, আর মোজাফফর এর ন্যাপ-
দল দুটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
————————————————————————-
নবম পর্ব
————————————————————————–
১৯৭৬ সালে বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে সামনে রেখে- জেনারেল জিয়া রাজনীতির দিকে হাত বাড়াতে থাকেন। যখন,জেনারেল জিয়া মোটামুটি সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন, তখন বিচারপতি সায়েমকে বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন।
————————————————————————–
জেনারেল জিয়া ১৯৭৬ সালে-এম এ আউয়াল এর মাধ্যমে – জাসদ এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে যোগাযোগ স্হাপন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নিকট শর্ত ছিলো – রাস্ট্রনায়ক হিসেবে জেনারেল জিয়াকে মেনে নেয়া।
আওয়ামী লীগের মিজানূর রহমান চৌধুরী, জেনারেল জিয়ার সাথে সম্পর্ক স্হাপনে রাজি ছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে – বঙ্গভবনে-
বিচারপতি সায়েম, জেনারেল জিয়া এবং বিমান, নৌ বাহিনী প্রধানদের নিয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এর ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দলের সাথে -বৈঠক হয়। বৈঠকে একপর্যায়ে -জেনারেল জিয়ার উক্তি ছিলো-
“আমার চেয়ে ভালো আওয়ামী লীগার কে? আমি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশগুলো প্রচার করেছিলাম।”
————————————————————————–
জেনারেল জিয়া -রাজনীতিকদের মধ্যে – প্রধানমন্ত্রী পদটির বিনিময়ে সমঝোতা করতে চাচ্ছিলেন। অনেক পরে, মিজানুর রহমান চৌধুরী-
জুতা দ্বারা ছাত্রদের হাতে নিগৃহীত হয়ে – জেনারেল এরশাদ এর প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। স্বপ্ন পুরণ হয়েছিলো- কিছু দিনের জন্য।
জাসদকে কি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো, তা অপ্রকাশিত।
————————————————————————–
১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই জেনারেল জিয়া, ব্যবসায়ে-ট্রেড লাইসেন্স করার মতন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য রেজিষ্ট্রেশন প্রথা জারি করেন।
নাম দেয়া হয়-“রাজনৈতিক দল বিধি বা প্রবিধান”। নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়- সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন থাকতে হবে।
————————————————————————–
মহান মুক্তিযুদ্ধে অতি বাম এবং অতি ডান এর – একটি সরল ঐক্য ছিলো।
উভয় পক্ষই মনে করতো- বাংলাদেশ -সৃষ্টি, রুশ- ভারতের ষড়যন্ত্র।
স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো- নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
পিকিংপন্থী বামপন্থীদের অনেক অংশ গোপনে চলে যায়।
তখনও – সাম্যবাদী দল- যে দলের উত্তরাধিকার দিলীপ বড়ুয়া,
সেই দলটিসহ অন্যান্য দলগুলো নামের পুর্বে- পুর্ব পাকিস্তান কিংবা পুর্ব বাংলা ব্যবহার করতেন।
জুলফিকার আলি ভুট্টোর সাথে অতিরিক্ত সখ্যতা ছিল মশিউর রহমান যাদু মিয়া’র।
ন্যাপ ভাসানীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন – তিনি।
এই গোষ্ঠীকে কাছে টেনে নেন- জেনারেল জিয়া। মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে -দেয়া হয় – প্রধানমন্ত্রীত্বের টোপ।
বেরিয়ে আসে- নিষিদ্ধ ঘোষিত- মুসলিম লীগ এবং তার নেতা আইউব খান এর এর মন্ত্রীসভার সদস্য খান এ সবুর,
জামাত ও নেজামে ইসলামি মিলে- গঠিত হয়- ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ, বেরিয়ে আসে- জামাত নেতা মাওলানা আব্দুর রহিম, আব্বাস আলী খান,মতিউর রহমান নিজামীসহ জানা অজানা রাজাকার সম্প্রদায়,
খন্দকার মোশতাক- শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গঠন করেন- বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক লীগ।
এম এ আউয়াল জাসদের কাউকে কিছু না জানিয়ে, সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
বেগম জোহরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে- বঙ্গবন্ধুর বাকশাল পুনরুজ্জীবিত না করে- ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী, শেখ মুজিবের হাতে ভেঙে যাওয়া আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
————————————————————————–
৩০ অক্টোবর ১৯৭৬ – পুর্ব বাংলা সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক – কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা- সরকারের কাছে দাবি করেন-
আওয়ামী লীগ, সিপিবি, ন্যাপ- মোজাফফর, জাসদ এই চারটি দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
************************************************
কমরেড তোয়াহার সাম্যবাদী দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া – শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন,
এখন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সাধারন সম্পাদক সাম্যবাদী দলের কংগ্রেস উদ্বোধন করেন।
————————————————————————–
কর্ণেল তাহের এর সাথে মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়া – মাহমুদুর রহমান মান্না জেল হতে বেরিয়ে এসে, জাসদ ছাত্রলীগ এর মুল নেতা হন।
ছাত্রদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা ছিলো- প্রবল। আ ফ ম মাহবুবুল হক, আখতারুজ্জামান তার সাথে ছিলেন।
মাহবুবুল হক জাসদ নেতা। আখতারুজ্জামান ছাত্র নেতা।
————————————————————————–
মান্না- আখতার সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে, – মধুর কেন্টিনে বসেই যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকেন।
কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং বাস্তবায়ন- কোনটাই করতে পারছিলেন না।
সিরাজুল আলম খান এর – সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এই দু’ জন কখনোই গ্রেফতার হননি।
————————————————————————
বিধ্বস্ত – হতাশ জাসদ কর্মীরা একজন / দুজন করে পা বাড়াতে থাকে বিদেশ বিভুইয়ে। স্হান- পশ্চিম জার্মান।
————————————————————————–
** এসকল তথ্য অনেকগুলো বই হতে সংগৃহীত। স্হান অভাবে ফেইসবুক এ পৃষ্ঠা / বইয়ের নাম উল্লেখ
করা যাচ্ছে না। তবে,লেখার শেষে বইগুলোর নাম উল্লেখ করা হবে।আমি লেখক না। লেখক হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনোই
ছিলো না,বর্তমানেও নেই। সুতরাং, ভালোলাগা এবং একসময়ের রাজনৈতিক সতীর্থদের মধ্যে কারো কারো
চাপাচাপিতে এই লেখা।
ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।সম্ভব হলে – পড়তে থাকুন –
জাসদের উথান পতনঃ অস্হির সময়ের রাজনীতি,
লেখক – মহিউদ্দিন আহমদ।
Writing: R Ali Khokan