নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব মন্ত্রণালয়েরই কিছু সাফল্য রয়েছে। ব্যর্থতার কথা বেশি বললে সাফল্য ঢাকা পড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে বলেন, “ব্যর্থ ব্যর্থ ব্যর্থ বলে শত্র”র হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তাহলে যেটুকু অর্জন আছে, তাও থাকবে না। সব মন্ত্রণালয়ের কিছু না কিছু সাফল্য আছে।
“আমি অসুস্থ ছিলাম বলে কয়েকদিন আসতে পারিনি, বাসায় বসেই সংসদের কার্যক্রম শুনতাম। এত ব্যর্থতার কথা শুনলাম, দশটা ভালো কাজ করলেও একটা কাজে ব্যর্থ হলে সেটাই বলা হয়। এ মানসিক দৈন্য কেন, তা বলতে পারবো না।”
বেহাল মহাসড়ক নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সমালোচনায় রয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তার পদত্যাগ দাবি সংসদেই করেছেন মহাজোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ব্যর্থ মন্ত্রীদের অপসারণ দাবি করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
গত বৃহস্পতিবার সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ কয়েজন অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন। সমালোচনায় রয়েছেন নৌমন্ত্রীও।
এত সমালোচনার মধ্যেও সরকারের সাফল্য বিচারে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাঙাালির ধৈর্যের অনেক অভাব। বঙ্গবন্ধু এসেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের শাসনভার হাতে নিলেন। তিনি তিন বছরও সময় পেলেন না। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হলো, মানুষকে বিষিয়ে তোলা হলো। তিন বছর যেতে পারলো না- পাটের গুদামে আগুন দেওয়া হলো, থানা আগুন দেওয়া হলো, আওয়ামী লীগের সাত জন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হলো।
“তারপরও যখন বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে পারলো না, তখন তাকে হত্যা করলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। কিন্তু, তারা ব্যবহার করলো কিছু মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তিকে। কী হারালো তখন বুঝলো না!”
প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ইনুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সরকারবিরোধী ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এ কথা বলেন।
ইনু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো এবং মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের সঠিক তালিকা প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান সবই ঠিক থাকতো, যদি না ‘৭৫ এর ঘটনা না ঘটতো।
“৩৫ বছরে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। ৩৫ বছর আগে বুড়িগঙ্গার পানি স্বচ্ছ ছিলো, পান করা যেত, এখন বুড়িগঙ্গার পানি সম্পূর্ণ দূষিত। এখন সেখানে মাছ নেই।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন নিয়ে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বামপন্থী বিভিন্ন দলের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যুগ ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।
“৩৫ বছর আগে ফিরে যাওয়া যাবে না”, বলেন তিনি।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়ে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সই করেছিলেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নূরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয় যেতে পারে এমন সব শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে নিট ভর্তির হার প্রায় শতভাগ।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অপু উকিলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার হলেও মাত্র সাত থেকে আট কিলোমিটারে পর্যটকরা যাতায়াত করে।
কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর একটি মহাপরিকল্পনা ধরে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
অটিজম প্রসঙ্গ
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের অটিজম নিয়ে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রদের অটিস্টিক শিশুদের অবহেলা না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “অটিস্টিক শিশুদের যতই সাধারণ স্কুলে রাখা যাবে, ততই তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশবে, ততই তারা নিজেদের সমাজের অংশ হিসাবে মনে করবে।”
অটিস্টিকদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তাদের সহায়তায় বিত্তশালীদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান হাসিনা।
অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেনের জন্য বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যায় কি না, তা জানতে চান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকী।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করাই ভালো।”
কুমিল্লা-৮ আসনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নাসিমুল আলম চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন, দেশে অটিজম মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং শুধু অটিজম নয়, বিভিন্ন নিউরোডেভেলপমেন্ট রোগীর ব্যাপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনে অটিজম সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৭ হাজার বর্গফুট স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা করেছে। এখানে দৈনিক গড়ে বিভিন্ন øায়বিক বিকলাঙ্গতাসহ অটিজমের প্রায় ২০০ রোগীর রোগ সনাক্ত, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে।