বাড়ি ছেড়ে কথিত হিজরতে যাওয়া ৫০ যুবককে নিয়ে শঙ্কায় আছে পুলিশ। আসন্ন দুর্গাপূজায় তারা কোনো জঙ্গি তৎপরতা চালাতে পারে এমন শঙ্কা থেকে নিরাপত্তায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজা উদ্যাপনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা-ঝুঁকি দুই ধরনের হয়। একটা হলো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা। আর অন্যটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা করা।
তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার শঙ্কা আমরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ গত এক মাস ধরে আমরা একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আপনারা জানেন ৫০ জন ছেলে তাদের বাসা-বাড়ি ত্যাগ করেছে। তারা কোথায় ট্রেনিং নিচ্ছে আমরা এখনো তা জানি না। তবে আমাদের গোয়েন্দারা এ নিয়ে কাজ করছে, আমরা আশা করি তারা ফিল্ডে কোনো অপারেশনে আসার আগে ধরে ফেলতে পারব। আর অন্যদিকে গুজব রোধে আমাদের সাইবার মনিটরিং চলছে। অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে, ভুয়া পোস্ট দিয়ে সহিংসতার ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। গত বছর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা নিয়ে যে ঘটনা হলো, এবারও এ রকম অপতৎপরতা থাকতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়সহ আমরা সারা দেশের ডিসি-এসপিদের নিয়ে মিটিং করেছি। কোথাও এ ধরনের কোনো অপতৎপরতা পাওয়া গেলে ডিসি-এসপিরা ওই সব জায়গায় চলে যাবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণদের নিয়ে এ ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করবেন তারা। যারা এ গুজব ছড়াবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিএমপি কমিশনার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, যেকোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত আছি যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন করতে পারে। আমাদের পাশাপাশি এবার মণ্ডপে প্রতিমা থাকা অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পাহারা দিতে আয়োজক কমিটিকে আমরা বলেছি, যেন কোনো ভাঙচুরের ঘটনা না ঘটে। কারণ আমরা আমরা দেখেছি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা তখনই ঘটে যখন মণ্ডপ ফাঁকা থাকে৷
রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ২৪২টি মণ্ডপে এবার পূজা উদ্যাপন করা হবে। এগুলোর মধ্যে ৫টি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত মন্দিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। এগুলোতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিসিটিভি স্থাপন করে মনিটর করা হবে। পুলিশ আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি জানান, এ ছাড়াও আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেকটর, ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অন্যগুলোতে মন্দিরের গুরুত্ব অনুযায়ী কোথাও একজন থানার এসআই, কোথাও একজন এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে আনসার ও মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকেরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নারী-পুরুষদের মণ্ডপে ঢুকতে ও বের হতে আলাদা পথ ব্যবহার করতে হবে। কেউ কোনো ব্যাগ নিয়ে মণ্ডপে আসতে পারবেন না, এমনটা হলে সেগুলো মণ্ডপের গেটের বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকতে হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদ্যাপনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার।