Breaking News

‘আমার বংশের প্রদীপটা শ্যাষ হয়া গেইছে’

‘বদেশ্বরী যাইতেকালে আমাদের বউ-ছোয়া, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে হারাইলাম। দুঃখ থুবার জায়গা নাই। আমি তিনজন হারাইছি। আমার মেয়ে, বড় ছেলে, ছেলের বউ গেইছে। আমার প্রদীপটা শ্যাষ হয়া গেইছে। আমার যে একটা বংশের প্রদীপ, সেটা শ্যাষ হয়া গেইছে।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়ার বটতলী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গলু চন্দ্র রায়। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন মঙ্গলুর জামাই বিনয় কুমার (৪৫)। সঙ্গে ছিলেন বোন, স্ত্রী, বাবা, শ্যালকসহ পাঁচ স্বজন। করতোয়া নদের মাঝ বরাবর নৌকা ডুবে জামাই কোনো রকমে সাঁতরে পাড়ে উঠে বেঁচে গেলেও বাকি সবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলু চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওতোগুলা সাংবাদিক ছিলেন ওইখানে কি করলেন। ফায়ার সার্ভিস ছিল। লাশটা আমাক দিতে পারল না ওঠেয়া। অথচ পাবলিক তুলে দিল। আজকে লাশের কাছে আমি যাইতে পারি না, তারপরও যাইতে হইছে আমাক। চিন্তা করে দেখেন আমি নিজেও সেন্সলেস, তারপরও যে দাঁড়ে আছি আপনার মাঝে, এটা আমি ভগবানের কাছে আরাধনা করছি। এতো দুঃখ বেদনা দেওয়ার পরে এর চেয়ে আমি কী বলব।’

তিনি জানান, গত রোববার মহালয়ার দিন বদেশ্বরী মন্দিরে ভক্তি করতে পুণ্যার্থীদের সঙ্গে জামাই বিনয় কুমার, মেয়ে পারুল রানী (৩৫), বড় ছেলে হরি কিশোর (৪৫), ছেলের বউ কনিকা রানী (৩০), কনিকার বোন মনিকা রানী (২৭) এবং কনিকা ও মনিকার বাবা সরেন রায় (৫৫) নৌকায় ওঠেন। নৌকা ডুবে যাওয়ার পর জামাই বিনয় কুমার কোনো রকমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরিবারের বড় সন্তান হরি কিশোর ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করে সংসারের খরচ বহন করতেন।

মঙ্গলু বলেন,‘যাকে নিয়ে আমি চলে ফিরে খাই, সে চলে গেছে আমি এখন কী করব। এই বয়সে আমার কোনো করার আছে। কী বলব আর কী বলার আছে। তীর্থস্থান যাওয়ার পথেও আমাদের মৃত্যু হয় আর এখানে বলার কিছু আছে। তাহলে ভগবানে কী সহায় হইল, হামার দেব-দেবতায় কী সহায় হলো। চিন্তা করেন কতগুলো লোক মারা গেলো। দুই একটা তো লোক নোহায়। এই যে এখন হইহই উঠে গেইছে বোদা থানাটার ভেতর, এটা কী অবাস্তব। এই যে আমার বাড়িতে তিনজন। আমার গ্রামে দুইজন। আরও তো আশেপাশের গ্রামে গেইছে। বিভিন্ন গ্রামে তো গেইছে। এই সংসারের সব দায়িত্ব ছিল আমার বড় ছেলের। আমি তো এখন বৃদ্ধ হয়া গেইছি বাবা। এখন আগের মতো চলাফেরা করতে পারি না।’

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *