মাদকের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্সে। মাদক বন্ধ করতে প্রশাসনও তৎপর রয়েছে। তারপরেও মাদক কারবারিরা চলছে বেপরোয়া। প্রতিনিয়ত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের কারবার। বিশেষ করে টেকনাফে কিছু মাদক কারবারিরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চালিয়ে যাচ্ছে এই মাদক কারবার। এদের রয়েছে বিশাল অস্ত্রধারী সিন্ডিকেট।
অদম্য একজন মাদক কারবারি ও অস্ত্রধারীর নাম সাইফুল করিম। সে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ও হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানেও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে চাঁদাবাজিসহ নানান অবৈধ কাজকর্ম নির্ভিগ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।
অর্ধ ডজন মামলা থাকার পরেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে ঠিকই অধরা রয়ে গেছে এই সাইফুল। তার বিরুদ্ধে রয়েছে টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা। যার মধ্যে মাদক মামলা নং: ২৩/৬৫১ তাং- ৬ জুলাই ২০২২। যে মামলায় তার এক ভাই ইয়াবা ও আইসসহ আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে। ৬১/৫৭৫ তাং- ১৬ জুন ২০২২- ০৬/১০৬ তাং- ০২/০২/২০২২ – ৫৩ তাং- ২২ মার্চ ২০১৩।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, এত অপকর্ম ও মামলার আসামি হয়েও কিভাবে একজন শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে, আইন সবার জন্য সমান কথাটা কি তাহলে অসত্য?
অভিযোগ রয়েছে, সন্ধ্যা হলেই দরগাহ পাড়া, নাটমোরা পাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম সিকদার পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে চলে ওপেন মাদক বেচাকেনা। যেখানে অস্ত্রশস্ত্রসহ সাইফুল করিমের ১৫-২০ জনের গ্যাং নিয়মিত টহলে থাকে। এই অস্ত্রধারীদের দেখে সাধারণ মানুষ ভয়ে আর মুখ খোলে না।
ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতা সাধারণ মানুষকে পিপড়াও মনে করেনা বলেও জানান স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তার উপর নেমে অমানবিক নির্যাতন। এভাবে সে টেকনাফের হ্নীলাতে ত্রাসের এক রাজত্ব কায়েম করেছে। গেল বছরের ২০ এপ্রিল সাইফুল করিমের বড় হ্নীলা ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর বড় ভাইয়ের ক্ষমতা বলে সাইফুল করিম আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নিয়মিত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তাদেরকে রক্ষা করে এই ছাত্রনেতা সাইফুল।
মাসোহারাধারী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সেখানে গিয়ে হাজির হয় সাইফুল। প্রতিবাদকারীদের উপর চলে হুমকি-ধমকি। তার হুমকি পেলে কেউ কারো বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেন না। এভাবে হ্নীলাকে এক মাদকের স্বর্গরাজ্য ও চাঁদাবাজির এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সাইফুল।
মাদক কারবার ও চাঁদাবাজি করে এখন সে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। নামে-বেনামে গড়েছে সম্পদের পাহাড় ও হয়েছে কয়েকটি ডাম্পার ট্রাকের মালিক। এসব ট্রাক দিয়ে সে পাহাড়ি মাটি কেটে বিক্রি করে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। তার এসব অপকর্ম দেখার যেন কেউ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় খেখোদের তালিকায়ও নাম এসেছে। ক্ষমতার জোরে হ্নীলা ইউনিয়নের হামজার ছড়ার বন বিভাগের কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে সেসব জমি স্ট্যাম্পে মূলে অন্যান্যদের দখল করে দিচ্ছে বলে জানা গেছ। গত মার্চ মাসে পাহাড় কাটার সময় টেকনাফ রেঞ্জ অফিসার অভিযান চালিয়ে সাইফুল করিমের দুটি ডাম্পার জব্দ করে নিয়ে গেলেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে রাতের অন্ধকারে রহস্যজনক কারণে ফেরত দেয় বন বিভাগ।
এ ইয়াবা গড ফাদার সর্বপ্রথম ইয়াবা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় ২০১৫ সালে ৩রা জানুয়ারি। সেদিন কক্সবাজার সদর থানার লিংক রোডে তিশা বাস কাউন্টারের সামনে থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অভিযানে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই সাইফুলকে ইয়াবাসহ কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
এ ঘটনায় করা মামলায় সাত মাস কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে বেরিকোরাগার থেকে বেরিয়ে সাইফুল হয়ে যায় আরও বেপরোয়া। জামিনের পরে গোপনে নয়, চালিয়েছে প্রকাশ্যে ইয়াবার কারবার। চলাফেরা মাফিয়া স্টাইলে। অভ্যন্তরীণ রোডে চলাচল করে বিমান যোগে। এরপর থেকেই তার অপকর্ম বের হতে থাকে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, সাইফুল করিমের মত বড় বড় ইয়াবার গডফাদার ও চাঁদাবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
অভিযুক্ত সাইফুল করিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাদকের মামলার কথা করলেও তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন। অন্যান্য অভিযোগগুলো সে অস্বীকার করেন এবং শত্রুপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও জানান। মাদকের মামলাগুলোর জন্য সুষ্ঠু তদন্তে বিভিন্ন দফতরে তিনি দরখাস্ত দিয়েছেন বলেও জানান।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার (ওসি তদন্ত) নাসির উদ্দিন মজুমদার বলেন, হাড়ির ভিতর কি করে তা তো জানা যায় না, এটা তো নির্ভর করবে তথ্যের উপর। তবে খোঁজখবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।