Breaking News

নির্বাচনের বাকি এক বছরের বেশি, এখনি রাজপথে উত্তাপ

নির্বাচনের এক বছরের বেশি বাকি থাকলেও এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে রাজপথ। বিএনপি ও তার শরিকরা নানা রকম কর্মসূচি দিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। মাঠে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।
দুই দল সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ একাধিক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বাইরে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও থেকে সংঘাত-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

বিএনপি নেতারা বহুদিন ধরে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা বলছেন। তবে গত কয়েক মাসে দলটি নানা ইস্যুতে বিক্ষোভ-মিছিল-সমাবেশ করে রাজপথে অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। শীর্ষ নেতারা সরকার পতনে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব শনিবার বলেছেন, এবার তারা কোনোভাবেই হারবেন না, সরকার পতন না করে ঘরে ফিরবেন না। এর আগে তিনি একাধিক বক্তব্যে এমনও বলেছেন, ‘সরকারকে ভাসিয়ে দেয়া হবে।’
রুহুল কবির রিজভী, রুমিন ফারহানাসহ অন্য নেতারা বলছেন, ‘খেলা হবে, ফাইনাল খেলা। আওয়ামী লীগ পালিয়েও বাঁচতে পারবে না।’
বাকযুদ্ধে বসে নেই ক্ষমতাসীন দলও। তারা বলছেন, আন্দোলনের নামে অরাজকতা-সহিংসতা হলে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করা দরকার, তার সবই করা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে মূলত বিশৃঙ্খলা করতে চাইছে। কিন্তু তা করতে দেয়া হবে না। নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে কিছু করলে তা সরকার কঠোর হাতে দমন করবে।’
বিএনপি নেতা-কর্মীদের মতোই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শুরু হয়েছে দুই দলের নেতাদের বাকযুদ্ধ।
গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক শোভাযাত্রায় পুলিশের গুলিতে শাওন নামের এক যুবক নিহত হন, যিনি যুবদল কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে।

বিএনপির অভিযোগ, এ পর্যন্ত সরকারি দলের হামলায় আহত হয়েছেন তাদের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। মিথ্যা মামলা করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ে নরসিংদীর মনোহরদী, যশোর, মাগুড়া, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির কার্যালয়ে হামলার খবর আসে গণমাধ্যমে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিনসহ ৯৪ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, এভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে বিরোধী শক্তিকে রাজপথেই মোকাবিলা করবেন তারা। বিএনপি ও তার শরিকদের মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা জায়গা দিলেও কোনোভাবে ‘বাড়াবাড়ি পর্যায়ে’ যেতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা।
তারা অভিযোগ করছেন, বিএনপি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের রাজনীতি করছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। যেখানে সন্ত্রাস, সেখানেই প্রতিরোধের ঘোষণার পাশাপাশি কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজপথের দখল নিতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দুটি আলাদা সমাবেশ করে শোডাউন করে যুবলীগ। সেখান থেকে বিএনপির আন্দোলন প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের এটি করতে দেয়া হবে না।’
ক্ষমতাসীন নেতাদের বক্তব্যে তাদের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি স্পষ্ট। বিএনপি নেতারাও বলছেন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, দুই দলের অবস্থান দেশের রাজনীতিকে আরও সহিংস করে তুলবে।

সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পেটানোই পুলিশের প্রথম কাজ। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না। ঢাকায় সবার চোখের সামনে লজ্জা পায় তারা, তাই পেটায় না। কম পেটায়। আর বাইরে (তৃণমূলে) পেটায়।’
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘একটা সংঘবদ্ধ চক্র দেশের অরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ক্ষেত্রবিশেষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজনীতিতে আরও সংঘাত হতে পারে।’

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *