Breaking News

মুক্তিযু’দ্ধের সময়ের ডাকাত দেলোয়ার এখন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

মোংলার বুড়িরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন

একাত্তরে মুক্তিযু’দ্ধের সময়ে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে মোংলার বুড়িরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তবে তিনি এখন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় প্রশাসনের তদন্তে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতাও মিলেছে। এরপরও তিনি পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় তার এক সন্তানের পুলিশেও চাকরি হয়েছে।

মুক্তিযু’দ্ধের কয়েক যুগ অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধা সেজে থাকা ডাকাত দেলোয়ারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষুদ্ধ বাগেরহাট জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর মোংলার বুড়িরডাঙ্গার বাসিন্দা সুদীপ সরকার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি অভিযোগে করেন।

সেই অভিযোগ থেকে জানা যায়, যু’দ্ধকালীন সময়ে সুন্দরবনে অবস্থান করে বাগেরহাটের রাধাবল্লবসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতেন মো. দেলোয়ার হোসেন। লিখিত ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তালিকায় বাগেরহাট জেলায় কোথায়ও দেলোয়ার হোসেনের নাম অন্তর্ভুক্ত নেই। অথচ নিজ জন্মস্থান গোপন করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নানা কুট কৌশলে মোংলায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন দেলোয়ার হোসেন। এরপর অর্থ ও কায়িক শক্তি ব্যবহার করে দালাল চক্রের মাধ্যমে বেআইনিভাবে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করান। যার গেজেট নম্বর ২৭৮৪।

এরপর ওই লিখিত অভিযোগের তদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মোংলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি শুনানি করেন। শুনানিকালে ৩২ জন সাক্ষী, ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় শতাধিত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত ও শুনানি শেষে চলতি বছরের ১১ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র রায় ও বাগেরহাট জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. রহমানসহ উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা দেলোয়ার হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অস্বীকার করেন।
মুুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি সুযোগ সুবিধা আদায় আর সন্তানকে পুলিশে চাকরি দেয়ার বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে নিজ এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যু’দ্ধে অংশ নেন অন্য সবার সাথে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এক সন্তানকে পুলিশে চাকরি দেয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেন তিনি।

তবে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাধাবল্লব এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গ্রুপ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্রনাথ পাল জানান, ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের পর ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে তিনিসহ ৬৫ জন কচুয়া এলাকায় যু’দ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যু’দ্ধ চলাকালীন সময়ে দেলোয়ার হোসেন মুক্তিযু’দ্ধে অংশ নেননি।

জিতেন্দ্রনাথ দাবি করেন, যু’দ্ধকালীন সময়ে দেলোয়ার হোসেন সুন্দরবনের ডাকাত সর্দার নুর ইসলামের সঙ্গে বনে ডাকাতিতে জড়িত ছিলেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা আর লুটপাট করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর ডাকাত সর্দার নুর ইসলামের মৃত্যুর পর দেলোয়ার তার (নুর ইসলামের) স্ত্রীকে বিয়ে করেন এবং নানা বির্তকিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় দেলোয়ার কখনও তার জন্মস্থান কচুয়ায় আসতে পারেনি। মোংলাতে স্থায়ী বসবাস করতে থাকেন। এরপর সে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে কোনো এক সময় মুক্তিযোদ্ধা সেজে গেছেন। দীর্ঘদিন প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে থাকা দেলোয়ার হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ না দেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার পূর্বপশ্চিমকে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিয়মনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদারকি করবেন তিনি।
এদিকে অভিযোগকারী সুদীপ সরকার বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার পর থেকে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *