স্টাফ রিপোর্টার | ২০ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার
ভারতের দিক থেকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে কূটনীতির ভাষায় একে সম্ভাব্য সঙ্কট বলা যেতে পারে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম শাহীদুজ্জামান। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত শাহীদুজ্জামান শ্রিংলার আকষ্মিক এই সফরকে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যখ্যা করেন। এক. উচ্চতর জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়া, দুই. এটাকি জানতো, না সারপ্রাইজ, তিন. সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কি দ্রুত না দেরিতে হলেও হবে। এই তিনটি প্রেক্ষিতে পুরো বিষয় বিশ্লেষণ করতে আমরা দেখতে পাই, ভারত জানতো না চীনের সঙ্গে কি হতে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশেকে চীনের সঙ্গে তিস্তার মতো বৃহৎ একটি সেচ প্রকল্পে অর্থায়ন চুক্তি থেকে যতটা সম্ভব নিবৃত করা যায় তা নিয়ে দ্রুতই কথা বলা জরুরি মনে করেছে ভারত।
আমি মনে করি, চীনের সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে কথা বলতেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এই ঝটিকা সফর। কারন, তাছাড়া এমন কোন এজেন্ডা ছিল না, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন ধরনের অ্যাপয়েন্টমেন্টও ছিল না। মিটিংগুলো নিয়ে বারবার সময় বদলানো হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে আকষ্মিকতা ছিল। এটা ভেবে দরকার কতখানি জরুরি হলে এভাবে বিশেষ বিমানে আসতে হয়। খেয়াল করলে দেখবেন, গত ক মাসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র সচিব কারও সঙ্গে দেখা করেননি। সুতরাং, সব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ভারত পুরো বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছে। বাংলাদেশের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে আমার মনে হয়, এর আগে ভারত যখন টিপাইমুখে বাধ নির্মাণ করতে চেয়েছে তখন তারা কথা দিয়েছিল এখানে সেচ প্রকল্প করবে না, বিদ্যুৎ প্রকল্প করবে। বন্যা বা ভূমিকম্পে কোন ক্ষতি হবে না। ভারত কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু ভারত যখন জানতে পারে চীন অরুণাচলের উত্তরে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে তখন ভারত এই বাধ নির্মাণ স্থগিত করে।
কারণ, ভারতের ভয় ছিল চীন যদি পানি প্রত্যাহার বা বন্ধ করে দেয় তাহলে এই বাধ অকার্যকর হয়ে যাবে। এছাড়াও আরও বেশকিছু কারন হয়তো ছিল। ভারতও একই ধরনের কাজ করছে তিস্তার পানি নিয়ে। তারা সিকিমের পাশে গজলডোবায় বাধ নির্মাণ করেছে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে। গজলডোবা ছাড়াও অন্তত তিরশটি ছোটবড় বাধ রয়েছে ভারতের ভেতরে। যা থেকে তিস্তার পানি ডাইভার্ট করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে ভারতের দ্বিমুখি নীতি স্পষ্ট।
এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে তিস্তা নিয়ে। বাধ নির্মাণ করে তিস্তার পানি যদি সংরক্ষণ করা যায় তাহলে একদিকে যেমন উত্তর থেকে পানি প্রবাহের প্রয়োজনীয়তা মেটানো যাবে অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের নোনা পানির অনুপ্রবেশ রোধ করে সম্ভাব্য মরুকরণ ঠেকানো যাবে। এটা ইন্টারেস্টিং টেস্ট কেস, ভারত কতোটা পারে আগামীতে এই চুক্তি থেকে বিরত রাখতে চীনের সঙ্গে দেখার বিষয়।