পুরো ভারত যখন ফরাসী রাফালের প্রথম চালানকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছিলো তখন এগুলো যাত্রাবিরতিস্থল আরব আমিরাতে দেখা দেয় ইরানি মিসাইল আতঙ্ক। ইরানের যুদ্ধ মহড়ার অংশ হিসেছে ছোঁড়া এসব মিসাইল আরব আমিরাতে আল দাফরা বিমান ঘাঁটির কাছে গিয়ে পড়ে। ভারতের পথে এই ঘাঁটিতেই যাত্রাবিরতি করছিলো রাফাল মাল্টিরোল জঙ্গিবিমানগুলো। ইরানি মিসাইল ছোঁড়ার খবরে ভারতে আতঙ্ক তৈরি হয়। আল দাফরা ঘাঁটিতে এক রাত থাকার পর বুধবার ভারতের আম্বালায় বিমানগুলোর পৌছানোর কথা রয়েছে।
জানা যায়, যেখানে রাফালগুলো রাখা ছিলো তার খুব কাছেই ইরানি মিসাইলগুলো গিয়ে পড়ে। বিপদ আঁচ করতে পেরে ভারতের বিমানবাহিনীর সদরদফতর চেয়েছিলো রাতের বেলাতেই যেন সেগুলো ভারতের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় সেটা করা যায়নি।
সূত্র জানায়, খবর পেয়ে ভারতীয় দূতাবাসের একট দল আল দাফরা ঘাঁটিতে ছুটে যায় এবং জঙ্গিবিমানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে জানানো হয় যে রাফালগুলো নিরাপদে আছে এবং সকালেই সেগুলো রওয়ানা দেবে।
ইরানের সামরিক মহড়া
হরমুজ প্রণালীর কাছে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে ইরান। জানা গেছে, তারা একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীর ডামি তৈরি করে তা ধ্বংসের অনুশীলন করে। গত জানুয়ারিতে ইরানের সামরিক কামান্ডার কাসেম সুলায়মানিকে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন থেকে মিসাইল ছুঁড়ে হত্যা করে। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো তিক্ত করে তোলে। মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ইরান এই মহড়ার আয়োজন করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইরান বহু সংখ্যক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে করা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিটিও বাতিল করেন। মার্কিন বাহিনী ইরানের চলমান মহড়াকে ‘দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মহড়া নিয়ে ইরানের প্রকাশিত ফুটেজে হেলিকপ্টার থেকে মিসাইল নিক্ষেপ, কামানের গোলা বর্ষণসহ আরো অনেক কিছু দেখানো হয়।
রাফালের জন্য ভারতের অপেক্ষা
এদিকে এনডিটিভি জানিয়েছে, ৭.০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে বুধবারই ভারতে এসে পৌঁছবে বহু বিতর্কিত ৫টি রাফাল যুদ্ধবিমান। হরিয়ানার আম্বালার বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে অবতরণ করবে সেগুলো। বিমানবাহিনী প্রধান আর কে এস ভাদৌরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিমানগুলোকে স্বাগত জানাবেন।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভারতে কোনও যুদ্ধবিমানের অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফরাসি সংস্থা দাসল্ট এভিয়েশন থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্যে ৫৯,০০০ কোটি টাকার একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুসারেই ভারতকে এই যুদ্ধবিমান জোগান দিচ্ছে ফ্রান্স।
তবে রাফালের আগমন উপলক্ষে পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে থাকা এই বিমানবাহিনী ঘাঁটির নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। আশেপাশের চারটি গ্রামে সবরকম সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুদ্ধবিমান অবতরণের সময় কোনওভাবেই কোনও বাড়ির ছাদে কেউ উঠতে পারবেন না এবং কোনওরকম ছবিও তোলা যাবে না। যদিও স্থানীয় এক বিধায়ক রাফালকে স্বাগত জানাতে স্থানীয়দের মোমবাতি জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আম্বালা বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। দিল্লির কাছে হরিয়ানার এই ঘাঁটিতে প্রথম দফায় আসা রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হবে। রাফাল যুদ্ধবিমান রাখার জন্য আম্বালা বিমানঘাঁটিতে আলাদা করে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিমান রাখার জায়গা (হ্যাঙ্গার), এয়ার-স্ট্রিপ ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম। ভারতীয় বিমানবাহিনীর “গোল্ডেন অ্যারোস” এ যোগ দিচ্ছে ৫টি রাফাল যুদ্ধবিমান।
এয়ার টু এয়ার মিসাইল রাফাল জেটগুলোর অন্যতম ইউএসপি। এর ফলে ১৫০ কিলোমিটার দূরের টার্গেট বিদ্ধ করতে পারবে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এয়ার টু এয়ার মিসাইল রাফাল জেটগুলোর অন্যতম ইউএসপি। এর ফলে ১৫০ কিলোমিটার দূরের টার্গেট বিদ্ধ করতে পারবে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ১০০ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে ৪৫ টি নিশানায় এক সঙ্গে আঘাত হানতে পারে রাফাল।
রাফালের বায়ু থেকে বায়ু এবং বায়ু থেকে ভূমিতে আঘাত হানার ক্ষমতা ৩৭০০ কিলোমিটার। রাফালকে বলা হচ্ছে ৪.৫ জেনারেশন এয়ারক্রাফট। রাফালের নির্মাণকারী সংস্থা দাসল্ট-এর দাবি, এগুলো ওমনিরোল এয়ারক্রাফট। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মিশনে এই যুদ্ধবিমানকে যে লক্ষ্যে কাজে লাগানো হয়, প্রয়োজনে রাফাল তার থেকেও অতিরিক্ত করার ক্ষমতা রাখে।
ফ্রান্সে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০ টি বিমান প্রস্তুত হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্যে অন্য ৫টি বিমান আপাতত ফ্রান্সেই রয়েছে। তবে ২০২১ সালের শেষের মধ্যে ৩৬ টি বিমানই তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।” অনুমান করা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে সবকটি রাফালই এসে যাবে।