মৌলভীবাজারের রাজনগরে চাঞ্চল্যকর এক নারী হত্যা ও গণধর্ষণের ঘটনার ২৩দিন পর হত্যার মূল ক্লু উদ্ধার করে ছয় আসামিকে আটক করেছে পুলিশ। দুজন আসামি এ হত্যাকাণ্ড ও গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর আরো দু‘জন আসামি পলাতক। সোমবার (৬ জুলাই) বিকালে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার আনুষ্ঠানিকভাবে এক প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকাল ৪ টায় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এই প্রেসব্রিফিংয়ে মৌলভীবাজার সুপার মো. ফারুক আহমদ তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ১২ জুন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের দক্ষিণটিলা গ্রামে মুকুল মিয়ার আকাশি বাগানের একটি গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রথমদিকে মেয়েটির কোনো নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম নেয়। রাজনগর থানা পুলিশও এর কোন সঠিক তথ্য জানতে পারেনি। ফলে হন্য হয়ে তারা খজতে থাকে এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু। স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাছে জানতে চায় এ হতভাগ্য মহিলার পরিচয়। পুলিশ কিছুতেই কোন ক্লু ধরতে পারেনি। অবশেষে মৌলভীবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমানের এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এ তদন্ত টিমের নির্দেশমতে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে ৪ জুলাই রাজনগর গিয়াসপুর গ্রামের জমসেদ মিয়াকে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে।
দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর জমসেদ মিয়া অজ্ঞাত নামা এ নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার রহস্য জানায়। পুলিশ জানায়, ১০ জুন রাতে সিলেটের হুমায়ূন চত্বর থেকে সুমি নামের এ যুবতীকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে শিপন ও সালমা নামের দু‘ব্যক্তি জমসেদ মিয়া, শেখ হুমায়ূন আহমদ, বাদশা খা ও সিএনজি আটোরিকশা চালক জাহাঙ্গির আলমের হাতে তুলে দেয়। রাতে ত্রনা বেগম গোলাপী নামের এক মহিলার বাড়িতে এ মেয়েটিকে নিয়ে আসা হয়। এ রাতে এ চারজন মিলে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে দু‘শো টাকা দিয়ে চলে যায়। পরদিন সন্ধ্যায় এসে এ মেয়েটিকে আরেক রাত তাদের কাছে থাকতে চাপ দেয়। এতে সে রাজি হয়নি। পরে তাকে সিলেটের শিপন ও সালমার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণ করতে চাইলে সে বাঁধা দেয় এবং চিৎকার করে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গির আলম তার বুকের উপর উঠে বসে। জমসেদ মিয়া দু‘পা চেপে ধরে আর শেখ হুমায়ূন আহমদ ও বাদশা খা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে চারজন মিলে মেয়েটির ওড়না মুখে পেঁচিয়ে আকাশি বাগানের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করেছে। এদিকে আসামি জমসেদ মিয়া ও এনা বেগম গোলাপী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। অপরদিকে শেখ হুমায়ূন আহমদ ও আবুল কালাম আজাদ নামের আরো দু‘জন আসামি পলাতক রয়েছে। আসামি সালমা বেগম এ মেয়েটির কোন পরিচয় দিতে পারেনি। সে জানায় তার ছদ্দনাম সুমি।