আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। শুক্রবার ভোরে ব্রেনস্টোক করার পর সফল অন্ত্রোপচার হলেও এখনো তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেঁধে আছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
এদিকে মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ও নিউরো সাইন্সের পরিচালক প্রফেসর ডা. দ্বীন মোহাম্মদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াসহ ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার সফল হলেও তার অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন। হাসপাতালে তার আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। আগামীকাল কী হবে তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারি না। সময়ের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটা বলতে হবে।
এর আগে শনিবার দুপুরে মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার ছেলে তানভির শাকিল জয় বলেন, ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে ৫ দিন আগে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তার করোনাভাইরাস ধরা পরে। করোনাভাইরাস থেকে আব্বা (মোহাম্মদ নাসিম) খুব দ্রুত রিকোভার করে। কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) সকালে আব্বার ম্যাসিভ ব্রেনস্টোক হয়। সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন করে যে রক্ত জমাট বেঁধেছিল সেগুলোর অধিকাংশই অপসারণ করা হয়। কিন্তু তারপরও আব্বা অত্যান্ত সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আছেন। কেননা এতো বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে যে মাথার ভেতরে এখনো বেশ কিছু রক্ত জমাট বেঁধে আছে।
তিনি আরও বলেন, এখানকার চিকিৎসরা আমাদের জানিয়েছেন আগামী ৪৮ ঘন্টা আব্বাকে যদি ওনারা স্থিতিশীল রাখতে পারেন তাহলে হয়তো জীবনসঙ্কট কেটে যেতে পারে। উনাকে এখন ভেন্টিলেটরে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ নাসিম বর্তমানে অচেতন অবস্থায় আছে জানিয়ে তার ছেলে জয় আরও বলেন, ৪৮ ঘন্টা পার হলে আব্বার একটা সিটিস্ক্যান করা হবে। দেখা হবে মাথার ভেতরের রক্তক্ষরণ কী রকম আছে। তারপর আরেকদিন মানে ৭২ ঘন্টা যদি তার শারীরিক অবস্থা এমন স্ট্যাবল রাখতে পরেন, তারপর হয়তো সাপোর্টটা আস্তে আস্তে কমিয়ে দিয়ে চেতনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। এসময় দেশবাসীর কাছে পিতার জন্য দোয়া চান তিনি।
গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে ওই পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেইন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরো সার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়।
এদিকে মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তানভির শাকিল জয় ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থাসহ সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপারেশন চলাকালীন সময়েও একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আরও উন্নত চিকিৎতার প্রয়োজন হলে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথানমন্ত্রী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভির শাকিল জয়।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্রও। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্রসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া: এদিকে মোহাম্মদ নাসিমের রোগ মুক্তি কামনায় শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি মোহাম্মদ নাসিমের রোগ মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া করার আহ্বান জানান।
এসময় ধানমণ্ডি কার্যলয়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবরউল আলম হানিফ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এসএম কামাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
এছাড়া মোহাম্মদ নাসিমের রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করে ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি। শনিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল এই দোয়ায় অংশ নেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি ঢাকা’র সভাপতি শাহে নেওয়াজ দুলাল, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনি প্রমুখ।