Breaking News

পর’কীয়া প্রেমিককে পেতে সন্তানকে দিয়ে স্বামীকে হ’ত্যা

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার রাণীরপাড়া গ্রামে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রেহেনা খাতুন নামে এক গৃহবধূ তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে হ’ত্যা করিয়েছেন নিজ সন্তানকে দিয়ে। হ’ত্যার মিশন সফল করতে কাজে লাগিয়েছেন প্রেমিক ও রেহেনার বোনের ছেলেকেও। প্রায় এক বছর আগে সেই হ’ত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও প্রেমিকের সঙ্গে তার ঘর করা হয়নি। তার স্থান হয়েছে কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে একটি জিডির সূত্র ধরে।

পুলিশ দেরিতে হলেও রেহেনা খাতুনের ওই নৃশংসতার কথা জানতে পেরে শুক্রবার দুপুর ১১টায় তাদের গ্রামের পাশের জমিতে পুঁতে রাখা তার স্বামী রফিকুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ এই হ’ত্যাকাণ্ডে জড়িত রেহেনা খাতুন (৩৭), তার প্রেমিক একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মহিদুল ইসলাম (৪৭), ছেলে জসিম (১৮) ও রেহেনার বোনের ছেলে তেকানিচুকাইনগর গ্রামের করিম আকন্দের ছেলে শাকিলকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোনাতলা স্টেশন থেকে প্রায় ৪ কিলোামিটার দক্ষিণে রাণীরপাড়া গ্রামের পাশে রেহেনা খাতুনের প্রেমিক মহিদুলের বর্গা নেয়া জমিতে রফিকুল ইসলামের লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার সকালে মহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সকাল ১১টায় রেললাইনের পাশে জমিতে ঘননকাজ শুরু করা হয়।

বগুড়ার মানবিক পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাসহ (বিপিএম-বার) উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে খোঁড়া-খুড়ির পর দুপুর ১টায় রফিকুলের অর্ধগলিত লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় রাণীরপাড়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের গ্রামে হাজার হাজার উৎসুক জনতা রফিকুলের লাশ দেখার জন্য সেখানে জড়ো হয়।
লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

শিবগঞ্জ-সোনাতলা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কুদরত-ই খুদা শুভ এ প্রতিবেদক-কে বলেন, সোনাতলা পাকুল্লা গ্রামের আজাদ আলীর মেয়ে রেহেনা খাতুনের (৩৭) সঙ্গে অনেক আগে রাণীরপাড়া গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে মরিচ চাষি রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে পাঁচ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। কয়েক বছর আগে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মহিদুল ইসলামের সঙ্গে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনার পর’কীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দু’জন ঘর বাঁধা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে পথের কাঁটা রফিকুল ইসলামকে তারা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

তিনি বলেন, যেহেতু প্রেমিক মহিদুল ইসলামের একার পক্ষে স্বামী রফিকুল ইসলামকে হ’ত্যা করা সম্ভব নয় সেজন্য লোকবল বাড়ানোর জন্য রেহেনা খাতুন তার তৃতীয় সন্তান জসিম এবং বোনের ছেলে শাকিলকেও সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। জসিম যেহেতু একটু সরল প্রকৃতির এবং ঠিকমত পড়ালেখা না করার কারণে ঘন ঘন বকুনি খেয়ে বাবার ওপর একটু বিরক্ত, তাই নিজের জন্মদাতাকে মারার কাজে তাকে ব্যবহারের সুযোগটি নেয় রেহেনা খাতুন।

‘পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৪ জুন রাতে রফিকুল যখন খেতে বসে তখন বেগুন ভর্তার মধ্যে মহিদুলের এনে দেয়া ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন রেহেনা খাতুন। এরপর তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে মহিদুল ও জসিম মিলে রফিকুলের বুকের ওপর উঠে তাকে শ্বাসরোধ করে হ’ত্যা করে। পরবর্তীতে শাকিলকে ডেকে এনে তারা তিনজন মিলে রফিকুলের লাশটি মরিচের বস্তায় ভরে মহিদুলের বর্গা নেয়া জমিতে পুঁতে রেখে চলে আসে।’
তিনি আরও বলেন, রফিকুল ইসলাম খু’ন হওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর ২০১৯ সালের ১ জুলাই তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম সোনাতলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলামের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, গত ১৪ জুন থেকে তাকে পাওয় যাচ্ছে না।

কিন্তু পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকদিন আগে মহিদুলের সঙ্গে রেহেনা খাতুনের পর’কীয়ার সম্পর্কের বিষয়টি পুলিশ জানতে পারে। শুক্রবার সকালে মহিদুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে এক বছর আগে রফিকুল ইসলামকে খু’ন করার কথা স্বীকার করে। এরপর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রেহেনা তার ছেলে জসিম ও রেহেনার বোনের ছেলে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, মায়ের প্ররোচনায় বাবাকে হ’ত্যা করায় ছেলে জসিম কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ হয়েছে। জসিমের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নিজ হাতে বাবাকে হ’ত্যা করার পর সে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছে। যে কারণে তার আর পরীক্ষায় দেয়া হয়নি। জিডি এখন হ’ত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। বড় ভাই শফিকুল ইসলামকে বাদী করে মামলাটি দায়ের করা হবে।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *