লালমনিরহাটের আদিতমারীতে করোনা সন্দেহে মৌসুমী আক্তার (২৩) নামে মৃত এক নারী পোশাক শ্রমিকের লাশ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার ইদের দিন বিকেলে জানাজা শেষে লাশ নিজ গ্রামে দাফন করে যৌথ থানা পুলিশ।
পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তার জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার স্বামী নিগৃহীতা মেয়ে। তিনি একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও নি’হতের পরিবার জানান, বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে ৬ মাস আগে বিয়ে হয় মৌসুমীর। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজিপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী। গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) অসুস্থতা অনুভব করলে একটি ট্রাকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পথে রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌছালে ট্রাকচালক তাকে মৃত দেখে লাশ ফেলে পালিয়ে যান। অজ্ঞাত লাশ হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
পরদিন শুক্রবার খবর পেয়ে মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। মেয়ের লাশ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই লাশসহ পুরো বাড়ি এবং মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ গোলাম মোস্তফার। অবশেষে নিরুপায় হয়ে গরিব বাবা মেয়ের লাশ দাফন করতে তাজহাট এলাকার একজন লাশবাহী গাড়িচালককে ৫ হাজার টাকা দেন। তারা লাশ দাফনের আশ্বাস দিয়ে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেন। দুই দিন পরে স্থানীয়দের খবরে রোববার (২৪ মে) রাতে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ।
সোমবার (২৫ মে) ইদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ লাশটির জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিতেই পরিচয় শনাক্ত করেন মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা। অবশেষে আদিতমারী থানা পুলিশ পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় নিজ গ্রামে মৃত মৌসুমীকে দাফন করে।
মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, হাতে পায়ে ধরতে চেয়েও লাশ গ্রামে নিতে দেয়নি আবু সাঈদ নিসাদ চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে একজন চালককে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি দাফন করতে। তারাও দাফন না করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অবশেষে আবারো মেয়ের লাশ শনাক্ত করতে হলো আদিতমারী থানায়। পুলিশের পাহারায় মেয়ের লাশ দাফন করি। মেয়ের লাশ নিয়ে যারা ব্যবসা করেছে তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি।
আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি ব্যাগে মোড়ানো মর্গের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ইউডি মামলা করা হয়েছে। মৃত নারীর পরিচয় জানার পরে মেয়ের বাবার আকুতি শুনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে লাশ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
এআর/এইচকে