দিনাজপুরের বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির দেড় ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেছেন সুশীলা রানী রায় (৩৮) নামে এক নারী। তিনি শ্বাসকষ্ট ও শরীরে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ না করেই ওই নারীর মরদেহ স্বজনরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন ওই রোগী সংস্পর্শে যাওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান মানিক জানান, শনিবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে তীব্র শ্বাসকষ্ট ও শরীরে ব্যাথা নিয়ে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনেরা। তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি করে তার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো যায়নি। বিকাল ৫টায় তার মৃত্যু হয়। এরপর তার স্বজনরা মৃতদেহ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
এদিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়ার পরও করোনা ভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ না করেই মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন রোগীর চিকিৎসাকাজে অংশ নেয়া এবং সংস্পর্শে আসা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, ২ জন নার্স, একজন আয়া ও একজন ওয়ার্ডবয়। ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা- এমন আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ডা. মাহমুদুল হাসান মানিক জানান, তাৎক্ষণিকভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিতরা না থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, বিরল উপজেলায় সারাদিন ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বিকালে এসব নমুনা নিয়ে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে জমা দিতে যায় নমুনা সংগ্রহকারী দল। ফলে মৃত ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ না করা পর্যন্ত মৃতদেহ হাসপাতালে রাখার কথা বলা হলেও রোগীর স্বজনরা তা না করে মৃতদেহ নিয়ে যায়।
এদিকে ছুটিতে থাকা বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মোকাদ্দেস শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী মৃত্যুর কথা স্বীকার করে বলেন, ওই রোগীর জ্বর ছিল না। তাই নিশ্চিত বলা যাবে না তার করোনা উপসর্গ ছিল।
কিন্তু নমুনা সংগ্রহ না করেই ওই রোগীর মৃতদেহ পরিবারকে নিতে দেয়া হলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে তার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে শনিবার দিবাগত রাতে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। তবে এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে অবশ্যই তার নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতালে যারা তার সংস্পর্শে গিয়েছিল এবং তার পরিবারের লোকজনের মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিষয়টি তিনি যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।
অপরদিকে মুত ওই নারীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকেন। মৃত্যুর খবর শুনে তিনি ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। ঢাকা থেকে আসার পর রোববার বেলা ১১টায় তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে।