Breaking News

নানার সঙ্গে নাতনীর বিয়ে: পরিবারের ক্ষোভ, সমালোচনার ঝড়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কত কিছুই না ভাইরাল হয়। সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই হাস্যরস যোগায়। তবে সম্প্রতি ফেসবুকে ৬৫ বছরের বুড়ো নানার সঙ্গে নাতনীর বিয়ের ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। যা বর্তমানে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। প্রথমে মিথ্যা সংবাদ মনে হলেও পরবর্তীতে আসলেই এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে। পরিবারের দাবি, সবার অগোচরে তাদের মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করেছেন ওই বৃদ্ধ। এদিকে, ঘটনার সত্যতা জানার পর এ ব্যাপারে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন অনেকে।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা ওই বৃদ্ধের নাম শামছুল হক শামু। তিনি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পেরুল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন রিক্সাচালক। অভিযোগ উঠেছে, একই উপজেলার দীঘির পাড় বাড়ির পশ্চিম পেরুল গ্রামের ইমাম হোসেনের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে তিনি প্ররোচনা দেখিয়ে বিয়ে করেছেন।

জানা যায়, গেল রোববার ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে তাদের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন হয়। পাত্রী মরিয়ম আক্তার পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ক্লাসে তার রোল নং- ৩২। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় মরিয়ম শামছুল হক শামুর রিক্সায় করে যাতায়াত করতো। তাছাড়া, বর শামছুল হক শামুর ছোট মেয়ে এবং বর্তমান স্ত্রী মোসাম্মৎ মরিয়ম আক্তার একই ক্লাসের ছাত্রী।

বর শামছুল হক শামু বিয়ের ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মরিয়ম আক্তার সম্পর্কে আমার নাতনী। দীর্ঘ দিন ধরে তাদের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তাদের বিপদে আপদে আমি সবসময় ছিলাম। আসা-যাওয়ার মাধ্যমে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। মরিয়ম আমার রিক্সায় করে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো।’

এই বুড়ো বয়সে আপনি কেন বিয়ে করছেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বউ অপারেশনের রোগী। সে সংসারে কাজ করতে পারে না, তাই করেছি। তাছাড়া আমরা দুজনের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুলে আমি তাকে বিয়ে করি। ১ লাখ টাকা উসুলের মধ্য আমি তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কানের জিনিস দেই এবং নগদ ১ হাজার ১৫শ’ টাকা দেই।’

মরিয়ম তো আপনার মেয়ের বয়সী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, তার বয়স ১৪ বছর, আপনি কিভাবে বিয়ে করলেন? এমন প্রশ্ন করলে বর শামসু বলেন, ‘মরিয়মের বয়স ২০ বছর তিন মাস। আপনি চেয়ারম্যান অফিসে যান কম্পিউটারে গিয়ে দেখেন।’

আপনি কোথায় কোন কাজী অফিসে বিয়ে করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘কোর্টে বিয়ে করেছি। কোন কোর্টে বিয়ে করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর কিছু বলতে পারবো না। আমি মূর্খ মানুষ, আপনি চেয়ারম্যানের কাছে যান, উনি সব বিচার করেছে। উনি সব জানে।’ এই কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর শামসুল হক শামুর ২ মেয়ে ৪ ছেলে। এর মধ্য ১ ছেলে ১ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এবিষয়ে মরিয়মের বাবা ইমাম হোসেন বলেন, ‘শামসু আমার বাড়ির কাজ করতো। আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার পরিবারের বিভিন্ন কাজ সে করে দিতো। তাকে আমি খুব বিশ্বাস করতাম। সে আমার মেয়েকে প্ররোচণা দিয়ে বিয়ে করে। সে একজন রিক্সাচালক। তার ঘরে স্ত্রী সন্তান রয়েছে। এই বয়স্ক একটা লোকের সাথে আমার মেয়ে কিভাবে সংসার করবে। আমি গরিব বলে কারো কাছে বিচার পাচ্ছি না।’

এ বিষয়ে পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিয়েটি আইনগত ভাবে হয়েছে। এটি কোনো বাল্যবিবাহ নয়। মেয়ের বয়স জন্মসনদ অনুযায়ী ২০ বছর তিন মাস। আমি ইউনিয়ন পরিষদে তাদেরকে ডেকে সকল কাগজ পত্র দেখেছি। যা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি।’

এ বিষয় লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘বিষয়টি আমি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শুনেছি। মেয়টির জন্ম সনদ ২০০৮ সালের করা। তখন কার সময় এনালগ ছিলো। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’

মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করায় এলাকায় অনেক চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। জনমনে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *