প্রতিদিন রংপুরে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হু হু করে ছড়িয়ে পড়া করোনা প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে যোগ হয়েছে মশার উপদ্রব। দিন-রাত মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। এতে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে জনমনে। এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এমন আশঙ্কা সচেতন মহলে।
এদিকে মশার উপদ্রব কমাতে সিটি করেপোরেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন স্প্রে ছিটানোর কার্যক্রম শুরু হলেও তা সীমিত পরিসরে চলছে। এতে করে মশার উৎপাতে দিনে কিংবা রাতের অধিকাংশ সময়ই কয়েল জ্বালানো এখন খুব স্বাভাবিক কাজে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর নগরীর ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী খালটি ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। এই খালটি এখন এডিসসহ নানা ধরনের মশার প্রজননের উর্বর ভূমি। এখানে দুর্গন্ধময় বিষাক্ত কালো পানিতে গা ভাসিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে মশা। সাথে আষাঢ় আসার আগেই আগাম বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায়ও আছে মশার মিছিল। এছাড়াও নগরজুড়ে স্থবির হয়ে পড়ে থাকা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের খোলসেও দেখা মিলছে মশার উপদ্রব।
নগরীর শ্যামা সুন্দরী খাল সংলগ্ন বসবাস করা পাভেল প্রান্ত পার্থ জানান, মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলাতেই কয়েল জ্বালিয়ে রাখছেন তারা। এই চিত্র আশপাশের বাড়িতেও। মশার উপদ্রব বেশি হওয়াতে রাতের পর দিনেও মশার উৎপাত কমাতে কয়েল জ্বলছে বেশির ভাগ বাসা বাড়িতে। এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশির ভাগ এলাকাতে চোখে পড়ার মতো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
নাগরিক প্রতিনিধিরা বলছেন, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। না হলে করোনার পাশাপাশি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক, ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, এই সময়টাতে ডেঙ্গু মশকের প্রজনন বাড়ে। কিন্তু উদ্বেগ হচ্ছে ডেঙ্গু আর করোনার উপসর্গ প্রায় একই রকম। ডেঙ্গুর এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই করোনার মতো ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করা, মশার উপদ্রব কমানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানো এখন জরুরি। এজন্য সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে করোনার সাথে ডেঙ্গু যদি একত্রিত হয়ে যায় ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখা দিবে।
এনিয়ে নগরবাসী হতাশ হলেও সিটি করপোরেশনের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তারা ইতোমধ্যেই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দশটি ফগার মেশিন, ৯৫টি হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে মশক নিধণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, করোনা প্রতিরোধসহ ডেঙ্গু মোকাবিলায় নগরীর প্রত্যেকটি ক্যানেল পরিষ্কার করা হয়েছে। জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়েছে। এডিস মশার লাভা ও প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে প্রত্যেকটি ড্রেনের মুখ ও ক্যানেলের দুইধারে স্প্রে ছিটানোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তাছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
রংপুর জেলায় এখনো কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়। তিনি বলেন, করোনার পরিস্থিতিতে সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা করোনার মতো ডেঙ্গুর ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ শুরু করা হবে।