Breaking News

অবশেষে প্রকাশ্যে এলো তিন পুলিশ সুপারকে অবসরে পাঠানোর প্রকৃত কারণ

গত ১৬ ই অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব মোঃ মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দেয়ার পর তিনজন এসপিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রশাসন মন্ত্রণালয়, যেটা নিয়ে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে আলোচনা। তবে ঠিক কি কারণে তাদেরকে হঠাৎ করে অবসরে যেতে বাধ্য করা হলো সে বিষয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে মন্ত্রনালয় থেকে বলা হচ্ছে, কোন কারণ ছাড়া তাদেরকে অবসরে পাঠানো হয়নি। বিভিন্ন বিষয়ে খতিয়ে দেখার পর তাদেরকে জনস্বার্থে অবসরে পাঠানো হয়েছে এমনটি বলেন তারা।
এবার তিন জন পুলিশ সুপার কর্মকর্তারা হলেন পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার মো. মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী ও দেলোয়ার হোসেন মিঞা। এর আগে রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠায় সরকার। এ নিয়ে এখনো চলছে নানা আলোচনা।

এদিকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তিন এসপিকে অবসরে পাঠানোর আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮ (অ্যাক্ট নং ৫৭) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। ‘
৪৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী ২৫ বছর চাকরি করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া যে কোনো সময় চাকরি থেকে অবসর দিতে পারে। তবে এর জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।

গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা ঠিকমতো কাজ করে না। ফেসবুকে অপপ্রচার চালান। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসব অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের অবসর দেওয়া হয়েছে। ‘
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি তাদের আগের চাকরির রেকর্ড তুলনা করে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

মির্জা আবদুল্লাহ বাকী বিসিএস ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাবনা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও গোপালগঞ্জে এসপির দায়িত্বে ছিলেন। আবদুল্লাহ বাকী রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক বা পিপিএম (সেবা) পান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার পদোন্নতি হয়নি। তার ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন অতিরিক্ত আইজি ও ডিআইজি।
দেলোয়ার হোসেন মিয়া ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী বিসিএস দ্বাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি আমলে জামালপুল ও মুন্সীগঞ্জ জেলার এসপি ছিলেন। শহীদুল্লাহ চৌধুরী পিপিএম পদকপ্রাপ্ত ড. দেলোয়ার হোসেন বিএনপি আমলে একাধিক জেলার এসপিও ছিলেন। তাদের দুজনকেই এসপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আবদুল্লাহেল বাকী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী ১ জানুয়ারী, ২০২৪ এবং দেলোয়ার হোসেন মিয়া ৪ জুন, ২০২৬-এ অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
পুলিশ ও জননিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি দুটি সংস্থা থেকে এসব কর্মকর্তার বিষয়ে গোপন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা কয়েকদিন আগে দেশের বাইরে গেছেন। গোপনীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের অবসরে যেতে বাধ্য করা হতে পারে। কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি দিতে না পারায় সরকার তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে।
মির্জা আবদুল্লাহ বাকী গতকাল রাতে বলেন, “সারাদিন অফিসে ছিলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর একজন সাংবাদিক ফোন করে খবরটি দেন। শুনে অবাক হয়েছিলাম। যাই হোক, এখন চাকরি নেই, এটাই সত্য। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমি সরকারের বিরুদ্ধে নই, কোনো দলের সদস্যও ছিলাম না।পুলিশে যোগ দেওয়ার পর পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছি।’

কেন তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে জানতে চাইলে আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে কিছু বলা হয়নি। বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ১০ দিন আগে সরকারি সফরে দুবাই গিয়েছিলাম। আমি সব সময়ই সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছি।’
মির্জা আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, আমার জুনিয়ররাও পদোন্নতি পেয়ে উপরে উঠে গেছে। তাদের আমাকে স্যার ডাকতে হয়। অনেকদিন এই অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আমার যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকত, তাহলে আমি ১০ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিতাম।’ অন্য দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, যারা একসময় আমার জুনিয়র হিসেবে ছিল তাদেরকে পদোন্নতি দেয়ার পর তারা এখন আমার উপরে উঠে গেছে। এখন তাদেরকে আমার স্যার বলে সম্বোধন করতে হয়। আমি আমার দায়িত্বে থাকা কালে তাদের পদস্থ করায় অনেকদিন ধরে এই ধরনের অপমান সহ্য করতে হয়েচে। তবে আমি এটা বলব যে আমার আর্থিক সামর্থ্য যদি থাকতো তাহলে আমি আরো দশ বছর আগে এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন কিছু করতাম। এ ঘটনার পর অবসরে যাওয়ার বিষয়ে অন্য দু’জন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার পরেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Check Also

‘কিছু কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রোগী ভাড়া করে রাখে’

কিছু কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রোগী ভাড়া করে রাখে বলে গণমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন আশুলিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *