রংপুরে বিএনপির জনসমাবেশের মাঠ এখন কানায় কানায় পূর্ণ। ভোর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এখন দলে দলে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন। দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ আগামী ১০ তারিখ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন সমাবেশে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় রংপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বিএনপির সমাবেশ।
এর আগে, সকাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে কালেক্টরেট মাঠে প্রবেশ করেন। এ সময় মাঠে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা তাদের উষ্ণ কড়তালির মাধ্যমে বরণ করে নেন।
রংপুর বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “সাধারণ মানুষের চোখে স্ফুলিঙ্গ আছে। এই স্ফুলিঙ্গের কারণে শেখ হাসিনার গদি তছনছ হয়ে যাবে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘রংপুরের মানুষের আন্দোলনের ইতিহাস আছে। যারা সারা রাত শুয়ে থাকা। তারা গণতন্ত্রের জন্য আরও অনেক সময় শুয়ে থাকবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হওয়ার আগে গদি ছাড়ুন।’’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের মাকে মিথ্য মামলায় বন্দী করেছেন। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। নাটক বন্ধ করুন।”
‘‘কাদের ভাই জোকারি বন্ধ করুন। ১০ তারিখে বিএনপির নতুন কমর্সূচি নিয়ে মাঠে আসছি। আমাদের ৪ বিভাগীয় সম্মেলন বলে, এই সরকারের কাছে মানুষ, দেশ, অর্থ কিছুই নিরাপদ নয়। মানুষের জীবন এখন বিপন্ন। দেশের স্বাধীন পতাকাকে নিয়ে খেলছেন। এই খেলা বাদ দেন। বাংলাদেশের মানুষ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। দেশের মানুষ পতাকার মর্যদা রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে,’’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে, ট্রেনে করে পুরো পথ দাঁড়িয়ে খুলনা থেকে রংপুরে এসেছেন খুলনা জেলা মহিলা দলের সদস্য শাহানা রহমান।
তার ভাষ্য, ‘‘এই দানব সরকার ভয় পেয়েছে। তারা বুঝে গেছে নিশিকালীন চুরি করে আর ভোট করা সম্ভব নয়। এখন জনগণ রাজপথ দখল করছে।’’
তিনি জানান, বিএনপির শতশত নেতাকর্মী রংপুরের মহাসমাবেশে একই পথে দাঁড়িয়ে থেকে এসেছেন।
অনেকেই গত রাতে আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পেরে সমাবেশস্থলেই রাত কাটিয়েছেন। পলিথিনের ওপর শুয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা। কেউ কেউ কম্বল ও শীতবস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়েই আসেন।
এদিকে, ধর্মঘটের কারণে রংপুরগামী আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে অন্য জেলার বাসগুলো রংপুরে প্রবেশ করতে পারেনি।
মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।
গত সপ্তাহে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট কার্যকর করা হয়। সেবারও দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাধা অতিক্রম করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিএনপি তার চলমান আন্দোলনের গতি অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আজকের সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ। প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি খুলনায়।
পরবর্তী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সমর্থন জোগাতে অন্যান্য বিভাগীয় সদর দপ্তরেও অনুরূপ সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।
ডিসেম্বরে ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি তাদের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে।